
ইসলামে জুমার দিনকে বিশেষভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এটি সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবে বিবেচিত। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দিবসসমূহের মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪) হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।’ (মুসলিম: ৮৫৪)
এই দিনে কিছু বিশেষ আমল রয়েছে যা মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে জুমার দিনের বিশেষ কিছু আমল তুলে ধরা হলো:
১. গোসল করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া
জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো গোসল করা। সালিম (রহ.) থেকে তাঁর পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজে আসে সে যেন গোসল করে আসে। (জামে তিরমিজি: ৪৯২)
২. সুন্দর পোশাক পরিধান করা
জুমার দিন বিশেষ দিনে একটি সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা উচিত। এটি রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত। তিনি সবসময় জুমার দিনে পরিষ্কার ও উত্তম পোশাক পরতেন। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমার সালাতে এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দুজনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১০৯৭)
৩. জুমার খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
জুমার নামাজের আগে খুতবা দেওয়া হয়। এটি মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং এর ওপর আমল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুতবার সময় কোনো কথা বলা বা অন্য কিছুতে মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়। এটি ওয়াজিব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় তার সঙ্গীকে বলল, ‘চুপ থাকো’ সে একটি অনর্থক কাজ করল। (সুনানে নাসায়ি: ১৪০১)
৪. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
জুমার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যায়।” (মুসনাদ আহমাদ)
৫. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে বলা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
“তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ, এই দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (আবু দাউদ)
৬. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় আছে, যখন আল্লাহর কাছে করা দোয়া কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“জুমার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন।” (সহীহ মুসলিম)
অনেক আলেমের মতে, এই মুহূর্তটি আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত।
৭। জিকির করা
ইমাম জুমার নামাজে আসার পূর্ব পর্যন্ত নামাজ, জিকির ও তেলাওয়াতে রত থাকা। জুমার দিনে যত বেশি সম্ভব আল্লাহর জিকির করা বাঞ্ছনীয়। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে বিশ্বাসীগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমার দিনটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ নেয়ামত। এই দিনে উপরোক্ত আমলগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং আমাদের ইহকাল ও পরকালকে আরও উজ্জ্বল করতে পারি।