
জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎসই হলো কুরআন। কুরআন বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নয়। কুরআন এবং বিজ্ঞানকে আলাদা করার কিছু নেই। আল-কুরআনে ছয় হাজারেরও বেশি নিদর্শনস্বরুপ আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে এক হাজারেরও বেশি আয়াত বিজ্ঞানের বিষয়বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করে নাযিল হয়েছে।
আপনাদের মধ্যে যারা আল-কুরআনকে অস্বীকার করেন বা যাদের মনে আল-কুরআন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, আমি আপনাদের একটি প্রশ্ন করতে চাই—আপনারা কি কখনো আল-কুরআন খুলে দেখেছেন? তার আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন?
আল-কুরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; এটি জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের এক অনন্য ভাণ্ডার। এতে এমন সব সত্য এবং বিজ্ঞানময় তথ্য রয়েছে যা আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। অনেক বিষয় আছে, যা আধুনিক বিজ্ঞান আজ আবিষ্কার করেছে, অথচ তা আল-কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন
ذَٰلِكَ ٱلْكِتَٰبُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
অনুবাদ: এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকীদের জন্য।
(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ২)
আল কুরআনের বিজ্ঞানময় আয়াত গুলো নিচে আলোচনা করা হলো –
1.পৃথীবির আকৃতি সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞান:
وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ
অনুবাদ:আল্লাহ পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতি করে তৈরি করেছেন
(আন-নাযিয়াত: ৩০)
প্রথম যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল। বহু শতাব্দীব্যাপী মানুষ দূরে সফরে যেতে ভয় পেত কি জানি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যায় কিনা। কিন্তু বিজ্ঞানী স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমান করেন যে, পৃথিবী গোলাকার । তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমন করেন।
2. দিন ও রাত্রির বিবর্তন সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞান:
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِىٓ إِلَىٰٓ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَأَنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অনুবাদ: তুমি কি দেখো না, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নিয়ে আসেন এবং দিনকে রাতের মধ্যে? তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মের অধীন করে রেখেছেন, সবই চলছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আর (তুমি কি জানো না) তোমরা যা কিছুই করো না কেন আল্লাহ তা জানেন।
(সূরা: লুকমান, আয়াত: ২৯)
সৌরজগতে পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আবার চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সে কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদের আপেক্ষিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে দিবা-রাত্রির পরিবর্তন হয়।
3. সূর্যের ও পৃথীবির আবর্তন সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞান:
وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
অনুবাদ: আর আল্লাহই রাত ও দিন তৈরি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।
(সূরা: আল আম্বিয়া, আয়াত: ৩৩)
সূর্য ও চন্দ্র প্রত্যেকেই এক একটি নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। এই কথাটি বিজ্ঞানীরাও প্রমাণ করেছেন।
4. পানি বাষ্পে পরিনত হওয়া সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞান:
وَأَرْسَلْنَا ٱلرِّيَٰحَ لَوَٰقِحَ فَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَأَسْقَيْنَٰكُمُوهُ وَمَآ أَنتُمْ لَهُۥ بِخَٰزِنِينَ
অনুবাদ: বৃষ্টিবাহী বায়ূ আমিই পাঠাই। তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে তোমাদের পিপাসা মিটাই। এ সম্পদের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে নেই।
(সূরা: আল হিজর, আয়াত: ২২)
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে পানিকে তাপ দিলে বাষ্পে পরিণত হয় এবং সেই বাষ্প আকাশে উড়তে থাকে যখন ভারি হয় তখন বৃষ্টি আকারে পড়ে। পানি বিভিন্ন ভাবে বাষ্প হতে পারে যেমন রোদের তাপে এবং আগুনের তাপে। পানির তাপমাত্রা যখন ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয় তখন পানি বাষ্প হতে শুরু করে।
5. পানি দ্বারা প্রাণী সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞান:
আর আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণ বিশিষ্টকে এক ধরনের পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
(সূরা: আন নূর, আয়াত: ৪৫)
সকল প্রাণের দেহে কম-বেশি পানি রয়েছে। তাই প্রাণী পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহের মধ্যে কোন কোথাও জটিল প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকতে হলে সর্ব প্রথম গ্রহটিকে তার হোস্ট নক্ষত্রের একবারে হ্যেবিটেবল বা গ্রিন জোনে থাকার পাশাপাশি সেখানে অবশ্যই লিকুইড ফর্মে বিপুল পরিমাণ পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে হবে। মোট কথা পানি ব্যতীত আপাতত কোথায় প্রাণের অস্তিত্ব বিকশিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তাই, আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাই—একবার অন্তত সম্পূর্ণ আল-কুরআন বাংলায় অর্থসহ পড়ে দেখুন। সময় নিয়ে চিন্তা করুন এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন যে আল্লাহ্ কী বার্তা দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি সৎ মন এবং খোলা মনে তা অধ্যয়ন করেন, তবে আল-কুরআনের সত্যতা আপনার কাছে নিজে থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
এখন সময় এসেছে সত্যকে জানার এবং স্বীকার করার। অন্ধভাবে কোনো কিছু প্রত্যাখ্যান করবেন না। আপনার বিবেক, যুক্তি এবং জ্ঞানকে কাজে লাগান। আল-কুরআনের আলো আপনাকে এমন এক জ্ঞান ও শান্তির পথে নিয়ে যাবে, যা আপনি আগে কখনো অনুভব করেননি।
লেখক
শফিকুল ইসলাম
মাল্টিমিডিয়া বিভাগ
হেড অব ভিডিও প্রোডাকশন, দিগন্ত কন্ঠ