শিক্ষার দ্বন্দ্ব: পাশ্চাত্যের ভোগবাদ বনাম ইসলামের পূর্ণতা
আব্দুল্লাহ আবু হুরায়রা আসিফ
শিক্ষা মানুষের জীবনের পথপ্রদর্শক। শিক্ষা আলোকিত করে, সঠিক দিশা দেখায়, আবার ভুল দিকেও চালিত করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে আজকের শিক্ষা কি আমাদের শুধু চাকরির জন্য প্রস্তুত করছে, নাকি মানুষ গড়ছে?
বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা মূলত পাশ্চাত্যের প্রভাবে গড়ে উঠেছে। এর মূল লক্ষ্য হলো পেশাগত দক্ষতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এ ব্যবস্থায় নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও আখিরাতের জবাবদিহিতার স্থান খুবই নগণ্য। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ডিগ্রিধারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু ন্যায়পরায়ণ মানুষ কমে যাচ্ছে। সমাজে জ্ঞানী আছে, কিন্তু খোদাভীরু নেই; দক্ষতা আছে, কিন্তু সততা নেই।
অন্যদিকে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের জীবনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা দেয়। ইসলামী শিক্ষার লক্ষ্য কেবল জ্ঞানার্জন নয়। বরং মানুষকে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনা, তাকওয়া সৃষ্টি করা, নৈতিকতা গঠন করা এবং আখিরাতের মুক্তির পথ দেখানো। ইসলামী শিক্ষা মানুষকে আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও খলিফাতুল্লাহ (পৃথিবীতে প্রতিনিধি) হিসেবে গড়ে তোলে।
কুরআনের প্রথম ওহী ছিল—“اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ”। অর্থাৎ শিক্ষা হবে আল্লাহর নামে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে। রাসূল ﷺ বলেছেন: “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ।” ইসলামের শিক্ষা শুধু তথ্যভাণ্ডার নয়; বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, নৈতিকতার বিকাশ ও সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা।
পাশ্চাত্যের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দুনিয়ায় উন্নতি দিলেও আখিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এর ফলাফল আমরা সমাজে প্রতিনিয়ত দেখছি। শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই দুর্নীতি, অনৈতিকতা, প্রশ্নফাঁস, মাদক, প্রতারণা ছড়িয়ে পড়ছে। পাশ্চাত্য শিক্ষা মানুষকে ভোগবাদী করেছে, কিন্তু শান্তি দিতে পারেনি।
অপরদিকে ইসলামী শিক্ষা মস্তিষ্ক ও হৃদয় উভয়কে গড়ে তোলে। এটি মানুষকে কেবল দক্ষ নয়, বরং আদর্শবান করে। ইসলামী শিক্ষা মানুষকে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন শেখায়—দুনিয়ার জ্ঞান অর্জন করবে, তবে আখিরাতের জবাবদিহিও ভুলবে না। বিজ্ঞানে অগ্রগতি করবে, তবে তা মানবকল্যাণে ব্যবহার করবে; নেতৃত্ব দেবে, তবে আল্লাহভীরুতার সাথে।
আজকের প্রয়োজন হলো দ্বীনি ও দুনিয়াবি শিক্ষার বিভাজন দূর করা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হতে হবে, যা একই সাথে ঈমান ও আধুনিক জ্ঞান—উভয়ে সমৃদ্ধ প্রজন্ম তৈরি করে। ড. ইসমাইল রাজী আল-ফারুকী যথার্থই বলেছেন: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যা আমাদের সন্তানদের ঈমান ও আধুনিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে, যেন তারা ভবিষ্যতে ইসলামের প্রতিনিধি হতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য মানুষ তৈরি করা, শুধু চাকরিজীবী নয়। পাশ্চাত্য শিক্ষা মানুষকে ভোগবাদী করে, কিন্তু ইসলামী শিক্ষা মানুষকে পূর্ণতা দেয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে এখনই ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।