আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা
– সালিমা মেহরা –
লিস্টে নিজের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন আর ‘হাইকোর্ট’ লেখা দেখে অনুভূতিটা কেমন ছিল?
বনি আপু বলছিলেন —
সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। আমাকে যদি সার্টিফিকেট না-ই দেয় তাহলে আমাকে রেজিস্ট্রেশন কেন করতে দিল? কনভোকেশন গাউন কেন দিল? মুহূর্তেই নিজের পায়ের নিচের মাটি সরে গেল মনে হলো। এখন ফ্যামিলির কাছে গিয়ে কী জবাব দিবো!
ব্যাচমেটরা সবাই হাসাহাসি করছিলো যে— সারাদিন সব করে এখন আসল জিনিসই পেলো না। তখন আমার ডিসিপ্লিন হেড স্যার বলেছিলেন যে,
“চিন্তা করো না, তুমি সার্টিফিকেট পাবে। পরে এসে যোগাযোগ করো।”
কিন্তু পরে আমি আর যাইনি। কারণ এর আগে যে পরিমাণ হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, এসব চিন্তা করে আর ইচ্ছা করেনি। তখন রওশন আরাও মূল সার্টিফিকেট পায়নি। পরে আমাদের হাইকোর্টের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করলে উনিও তেমন কিছু করতে পারেননি।
এর মধ্যে করোনা শুরু হলো। ২০২০, ২০২১ সাল গেলো। পরে ২০২২ এর আগস্টে নতুন করে আমাদের বিষয়টি হাইকোর্টে তোলা হয় এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের মূল সার্টিফিকেট পাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। রওশন আরা সার্টিফিকেট পায়। এরপর ওই বছরের অক্টোবরে আমি আমার অনার্সের মূল সার্টিফিকেট ও মাস্টার্সের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট হাতে পাই।
সেদিন কাগজ দুটো হাতে পেয়ে মনে হচ্ছিলো, “আল্লাহ! এই সামান্য দুইটা কাগজের জন্য কত ঝড় বয়ে গেল! তবুও সকল প্রশংসা আল্লাহর!”
তখন মাইশা, সীমা আর ফারজানার জন্য খুব খারাপ লাগছিলো। ওরাও যদি শুরু থেকে আমাদের সাথে থাকতে পারতো তাহলে হয়তো আমাদের সার্টিফিকেট পাওয়া আর ওদের পড়াশোনা কন্টিনিউ করার পারমিশনটা আরো সহজে পাওয়া যেতো।
এখন যেহেতু পট পরিবর্তন হয়েছে তাই আমি চাই সবাই ন্যায়বিচার পাক। আমাদের জীবন থেকে যে ছয়টা (২০১৭–২০২২) বছর চলে গেছে তা আর ফিরে পাবো না, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আমাদের গল্পগুলো জমা থাক। ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত থাকুক। আমি চাই সবাই সত্যিটা জানুক।
প্রায় দশ বছর হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের ভার্সিটিরই একটা পেজে যখন আমার দেশ পত্রিকার রিপোর্ট শেয়ার করা হলো, তখন সেখানে অধিকাংশ কমেন্টে আমাদের নিয়েই বাজে মন্তব্য করা হয়েছে। এরা তো আসল সত্যিই জানে না! দশ বছর আগের ঘটনাকে এরা এখন এই সময়ে বসে আমাদের পরিস্থিতিকে জাস্টিফাই করছে! অথচ এরা বেশিরভাগই এখনকার রানিং স্টুডেন্ট!
এর আগে স্টুডেন্ট থাকাকালীন অনেক শুনেছি যে, ভার্সিটির ভেতরে অনেক স্টুডেন্টকে মাদকসহ নানা অনৈতিক কাজের জন্য স্টুডেন্টদের DSA (ছাত্র বিষয়ক পরিচালক) অফিসে ডাকা হয়, আবার তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা যারা প্র্যাকটিসিং মুসলিম হয়ে চলতে চাই, আমাদেরই ডেকে, মিথ্যা আশ্বাস দেখিয়ে ভুলভাবে স্টেটমেন্ট লিখিয়ে পরে আমাদেরই বহিষ্কার করে!
২০১৭ এর ১লা জানুয়ারি থেকে ২০২২ এ সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া পর্যন্ত সময়ের প্রতিটা দিন আমাদের উপর দিয়ে, আমাদের ভেতর দিয়ে কী গেছে, তার ক্ষতিপূরণ কি এই বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারবে? কখনোই না!
(চলবে…)