আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা
– সালিমা মেহরা –
রায়ের পরও পরিবেশ কতটা প্রতিকূল ছিল?
বনি আপু বলছিলেন—
“অনার্স শেষ হবার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার ও রওশন আরার সার্টিফিকেট আটকে দিয়েছিল। পরে রওশন আরার মতো আমাকেও আলাদাভাবে আবেদন করতে হয়। নানা হয়রানির পর প্রভিশনাল সার্টিফিকেট পেয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হই।
মাস্টার্সে ভর্তির জন্য এপ্লাই করার লাস্ট ডেটের একেবারে লাস্ট মোমেন্টে আমি প্রভিশনাল সার্টিফিকেট হাতে পাই এবং ভর্তি ফরম জমা দেই।
এখনও মনে পড়ে, সেদিন সাবেক রেজিস্ট্রার টিপু সুলতান স্যারের কাছে খুব করে অনুনয় করেছিলাম—
‘স্যার, আমার আজকেই প্রভিশনাল সার্টিফিকেটটা দরকার।’
উনি জিজ্ঞেস করছিলেন— ‘এটা দিয়ে কি করবে?’
বলেছিলাম— ‘স্যার, আজ আমার মাস্টার্সে এপ্লাই করার শেষ দিন।’
উনি বললেন— ‘কোথায় করবে?’
আমি বললাম— ‘এখানে।’
তখন উনি খুব তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললেন—
‘তুমি এখানে মাস্টার্স করবা? এত কিছুর পরও? সত্যিই অবাক হলাম!’
এসব শুনেও তখন আর মন খারাপের কোনো অনুভূতি ছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো— যেভাবেই হোক মাস্টার্স আমাকে করতেই হবে।
আল্লাহর মেহেরবানীতে আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করতে সক্ষম হই। এরই মধ্যে কনভোকেশন হয়। আমি রেজিস্ট্রেশনও করি। ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে সারাদিন আশায় ছিলাম কখন সার্টিফিকেট পাবো।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম। বহু আকাঙ্খিত গাউন পরে পরিবারের সাথে ছবিও তুলেছিলাম। বারবার চোখ ভিজে আসছিলো। আল্লাহর শুকরিয়ায় যে, যেদিনের স্বপ্ন বুকে লালন করেছিলাম, এতকিছুর পরেও সেটা আল্লাহ আমাকে বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য দিয়েছেন। আব্বু-আম্মু আর কষ্ট পাবে না আমাকে নিয়ে।”**
কিন্তু আল্লাহর আরো পরীক্ষা বাকি ছিল।
সার্টিফিকেট কালেক্ট করতে যখন সন্ধ্যার পর আমার ব্যাচমেটদের সাথে গেলাম, তখন স্যার আমাকে বললেন—
“সরি, তুমি আজ সার্টিফিকেট পাবে না।”
উনি আমাকে লিস্টটা দেখালেন যেখানে দেখলাম আমার নামের পাশে পেন্সিল দিয়ে ক্রস দিয়ে পাশে লেখা— “হাইকোর্ট”।
(চলবে)