আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা
– সালিমা মেহরা –
বনি আপু গ্রেফতারের পরের দিন বিকালে আমি দেখা করতে যাই বনি আপুর মায়ের সাথে।
তিনি কাঁদছিলেন আর বলছিলেন—
“আমার মেয়েকে ওরা জঙ্গি বলেছে। ওরা কি জানে আমার বনি কেমন? বল মা, আমার বনিকে তুমি চেন না? ওর কি কোনো অপরাধ আছে?”
সানজানা আফরিন বনি—
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথের মেধাবী ছাত্রী।
ফাইভ-এইটে বৃত্তিসহ S.S.C – H.S.C-তে গোল্ডেন A+ রেজাল্টধারী।
তার একমাত্র অপরাধ, তিনি ছিলেন ছাত্রী সংস্থার সদস্যা।
গ্রেফতারের সময় আপু অনার্স ফাইনাল ইয়ার, লাস্ট সেমিস্টারে ছিলেন।
কারাগারে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে একাডেমিক বই-খাতার প্রয়োজন।
আপুকে বই দিতে কারাগারে যেতে হবে, তাই বই আনতে এক বিকালে বনি আপুর বাসায় গেলাম।
ডাইনিং টেবিলে একাকী বসে ছিলেন আপুর আম্মা।
টেবিল খাবারের বক্সে পূর্ণ।
আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
বললেন—
“মা, আজকে বনিকে দেখতে গিয়েছিলাম। এই সব খাবার রান্না করে নিয়ে গেছি, ওরা একটা খাবারও আমার বনিকে দিতে দেয়নি। তুমি এই খাবারগুলা খাও মা। তুমি খেলে আমার মনে হবে আমার বনি খাচ্ছে।”
এখনো কোথাও খাবার সাজানো ডাইনিং টেবিল দেখলে এই স্মৃতি ধাক্কা দেয়।
আর খাবারগুলো আমার ঝাপসা দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যায়।
বনি আপুর জেল জীবনের ব্যাপ্তিকাল ছিল ১ মাস ২৪ দিন।
তবে অন্ধকারের শুরুটা তখনো পুরোপুরি হয়নি।
শুরু হলো তারও মাস খানেক পরে।
সে ঘটনার পরতে পরতে আমি দেখেছিলাম যয়নাব আল গাজালি, আমিনা কুতুবের এক উত্তরসূরিকে…
(চলবে)