ফ্যাসিবাদের মনোরঞ্জনে ইসলামোফোবিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: পাঁচ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস (পর্বঃ ০১)

আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা

সালিমা মেহরা

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে তখন চলছে ফ্যাসিবাদী যালিমের যুলুম। রাষ্ট্রের আয়তনের থেকে দ্বিগুণ-তিগুণ হয়ে গেছে যুলুমের পরিমাণ। সে যুলুমে প্রতিনিয়ত লেখা হচ্ছে সাধারণ নাগরিক জীবনে নিপীড়নের কালো অধ্যায়।

এমনই এক সময়ের দুপুর। একটু তাড়াহুড়ো করে খাবার খাচ্ছিলাম। কোচিং-এ যেতে হবে।

রুমমেট হালিমা সাদিয়া রুমে ঢুকতেই বললাম,
— খেয়ে নাও হালিমা।

হালিমা বোরকা পরতে পরতে বলল,
— না আপু, হাসপাতালে যেতে হবে।

বললাম,
— কেন?

বলল,
— নড়াইল থেকে এক বোনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বোনটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা!! আড়াইশ বেড (খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) মেডিকেল প্রিজনে আছে।

বললাম,
— অপরাধ কী?

হালিমা বলল,
— উনার স্বামী জামায়াত করে। বোনটি ছাত্রী সংস্থার অগ্রসরকর্মী ছিল।

হালিমা বের হয়ে গেল, আমিও প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে নিলাম। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিল। হালিমা ফিরে আসার অপেক্ষা করছি হালিমা ফিরল ঘণ্টা দুয়েকের ভেতর, মুখটা বিষণ্ন। জিজ্ঞাসা করতে ভয় লাগছিল— বোনটির অবস্থা?

হালিমা নিজেই বলল,
— আপু, উনার প্রয়োজনীয় কিছুই দিতে দেইনি। দূর থেকে একটু দেখতে পেরেছি মাত্র। উনার মুখ বিবর্ণ ছিল, হয়তো অনেক কষ্ট পাচ্ছে। পানি চেয়েছিল কিন্তু আমাদেরকে দিতে দেয়নি, আর কর্তৃপক্ষও দেয়নি। দূর থেকে এটা দেখে চলে এসেছি।

মনে পড়ে, সে রাতে আমি পানি খেতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। এখনো পানির গ্লাস হাতে নিলে সেই বোনটার কথা মনে পড়ে।

আমার জীবনে জোৎস্না রাত, বিকালের হিমেল হাওয়া, দুপুরের রোদের গন্ধ আর মৃদু আলোর সকাল আসে এখনো। তবু অনেক মাজলুম মুখ ভুলতে পারি না।

এমন এক মুখ বনি আপুর আম্মু।

২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। রাত সাড়ে দশটা। পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায় বনি আপুর বাসার সামনে। মিনিট বিশেকের মধ্যে বনি আপুকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি খালিশপুর থানার দিকে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ বনি আপুর আম্মা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন,
— তোমরা আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? আমি ওকে একা যেতে দেব না।

উত্তরে পুলিশ অফিসার বলেন,
— আচ্ছা, আপনিও আমাদের সাথে আসুন। আপনার মেয়েকে থানায় নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে ছেড়ে দিব।

এরপর থানায় চলে অন্যায়ভাবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা কেন্দ্রিক জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন আর ক্যারিয়ার ধ্বংসের হুমকি।

সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও সেই রাতে বনি আপুকে গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় রাখা হয়। আর বনি আপুর আম্মা ফিরে আসেন।

(চলবে)