ফ্যাসিবাদের মনোরঞ্জনে ইসলামোফোবিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: পাঁচ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস (পর্বঃ ০৯)

আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা

সালিমা মেহরা

২০১৭–২০২২ সাল

এই সময়ের ক্ষতির কারণে রওশন আরা আপুর আর এমবিএ করা হয়ে ওঠেনি। সীমা আজও তার সার্টিফিকেট পাননি।

ঘটনার দিন, ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর, সীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সফরে কক্সবাজার ও মহেশখালীতে ছিলেন। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষা সফর শুরু হয়েছিল ৮ নভেম্বর, যা শেষ হয় ১৭ তারিখে। তিনি কখনোই আবাসিক ছাত্রী ছিলেন না। ফলে অপরাজিতা হলের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি ছিল অবান্তর।

এসব তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করলে তদন্ত কমিটি তাকে জানায়, তাদের কথা মতো কাগজে স্বাক্ষর করলে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এরপর তাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়—
“আমি ইসলামী ছাত্রী সংস্থা নামক সংগঠনের একজন সদস্য।”

সীমার দাবি, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না; তবে কঠোরভাবে পর্দা মেনে চলতেন। বহিষ্কারাদেশের পূর্বে তিনি সিজিপিএ ৩.৫৩ নিয়ে অনার্স পাস করেন। কর্তৃপক্ষ তার সার্টিফিকেট আটকে রাখে। সীমার বাবা হুগলী বেকারির একজন শ্রমিক। সামান্য বেতনের টাকায় সাত সদস্যের পরিবারের বোঝা বয়ে আজ তিনি শয্যাশায়ী।

সীমা মাস্টার্স করতে পারেননি। এইচএসসির সার্টিফিকেট দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে চাকরি করছেন। অথচ অনার্সের সার্টিফিকেট থাকলে আজ প্রথম শ্রেণির একটি সরকারি চাকরি অথবা এর চেয়েও ভালো মানের কোনো চাকরি হয়তো করতেন দারিদ্র্যের কষাঘাত মাড়িয়ে উঠে আসা অদম্য মেধাবী সীমা।

মায়িশা ইসলামের বাবা একজন আলেম, একটি কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ। তাকেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা অকথ্য ভাষায় অপদস্থ করেন। তিন বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর মায়িশা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সময় ও অর্থদণ্ড দিয়ে বর্তমানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামান্য বেতনে চাকরি করছেন।

সম্প্রতি সীমা ও মায়িশা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদনে তারা তাদের ওপর ঘটে যাওয়া জুলুমের প্রতিকার দাবি করেছেন।

আবেদনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, আটকে রাখা সার্টিফিকেট প্রদান, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং যাদের অন্যায় সিদ্ধান্তে তারা আজকের এই পরিণতিতে পৌঁছেছেন— তদন্ত কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন ছাত্রবিষয়ক পরিচালক ড. অনির্বাণ মোস্তফা, অপরাজিতা হলের তৎকালীন প্রভোস্ট ড. হোসনা আরা, সহকারী প্রভোস্ট নিপা অধিকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিচার দাবি করেছেন।

(চলবে…)