ফ্যাসিবাদের মনোরঞ্জনে ইসলামোফোবিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: পাঁচ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস (পর্বঃ ০৬)

আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা

সালিমা মেহরা

অবশেষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ ভুক্তভোগী দুই বোন জাজ কোর্টে মামলা দায়ের করেন। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে কোর্টের রায় ছাত্রীর পক্ষে আসে। এ রায়ে আশার আলো দেখতে পান তাঁরা।

কিন্তু না— বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। অবশেষে মামলা জাজ কোর্ট থেকে হাইকোর্টে স্থানান্তরিত হয় হাইকোর্টের রায়ও ছাত্রীর পক্ষে আসে। এবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

ততদিনে একটি বছর গত হওয়ার পথে। সবশেষে সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের প্রথম রায় পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রওশন আরা আপুর শেষ সেমিস্টার অর্থাৎ থিসিসের অনুমতি দেয়। কিন্তু বনি আপু কন্টিনিউ করার অনুমতি পাননি। নিরুপায় বনি আপু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চেষ্টা শুরু করেন।

এক সকালে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে কথা বলতে যান বনি আপু। সাথে আমিও ছিলাম। এডমিশন অফিসার আপুর রেজাল্ট শিট দেখে বিস্ময়ে হতবাক!

বললেন:
“আপনার এই রেজাল্ট নিয়ে তো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার কথা। অথচ আপনি এইচএসসি’র পাঁচ বছর পর ভর্তি হতে এসেছেন প্রাইভেটে!
কি হয়েছিল এতদিন? কেন পড়াশুনা করেননি?”

বনি আপু ছোট করে উত্তর দিলেন:
“স্যার, অসুস্থ ছিলাম।”

একরাশ বিস্ময় নিয়ে স্যার বললেন:
“কেমন অসুস্থ ছিলেন? কোথাও ভর্তি হয়ে থাকতেন? বাসায় বসে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতেন? পাঁচ বছর আপনি কি বিছানায় পড়ে ছিলেন?
যাইহোক, এই রেজাল্টে এই ধরণের কেস রেয়ার। আমরা আমাদের মিটিংয়ে আপনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তারপর সিদ্ধান্ত জানাব।”

আমরা বুঝে গেলাম— এখানেও ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়।

এরপর বেশ কিছুদিন পর একটা কাজে বনি আপুর বাসায় গেলাম। আপুর রুমের পরিচিত সেই সাজই আছে, শুধু পড়ার টেবিলের বইগুলো বদলেছে! ভার্সিটির ম্যাথের বইয়ের পরিবর্তে ডিগ্রি (পাস কোর্সের) বই রাখা।

আমি জিজ্ঞাসা নিয়ে আপুর দিকে তাকালাম।
স্বভাবসুলভ হাসিতে আপু বললেন:
“অবশেষে ডিগ্রিতেই ভর্তি হলাম।”

আমার মনে হলো— আমার হৃদয়ে কেউ জ্বলন্ত লোহা চেপে ধরেছে।

২০১৮ সালের এপ্রিল। ততদিনে আমি খুলনা ছেড়ে মিরপুরের বাসিন্দা।
গ্রামের বাড়িতে এসেছি।

গোসল করতে পুকুরে দাঁড়ানো অবস্থায় ফোন বাজার শব্দ পেলাম।
আম্মা দূর থেকে বললেন:
“বনি ফোন দিয়েছে।”

আমি আধভেজা অবস্থায় দৌড়ে ফোন ধরলাম।

সালাম বিনিময়ের পর আপু জানালেন—
“হাইকোর্টে পুনঃরায়ে আমি খুলনা ভার্সিটিতে শেষ সেমিস্টার কন্টিনিউ করার অনুমতি পেয়েছি।”

আলহামদুলিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ।

দিনটি ছিলো ১৯-৪-১৮
এক বছর চার মাস পর রায় পেলেন।

তবে এখানেই শেষ ছিল না……

(চলবে)