আওয়ামী দু:শাসনের কালে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সফরনামা
– সালিমা মেহরা –
বহিষ্কারাদেশের পর কেন্দ্রের নির্দেশনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয় ভুক্তভোগী বোনদের পক্ষে আইনী লড়াই করবে ছাত্রী সংস্থা, খুলনা মহানগরী।
এ বিষয়ে কথা বলতে ও সমবেদনা জানাতে মহানগরীর তৎকালীন সভানেত্রী বাশিরান নাজিরা আপুর সাথে ফারজানার (দ্বিতীয় বর্ষ, ব্যবসায় প্রশাসন) বাসায় গিয়েছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আকস্মিক সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, পরিবার-আত্মীয়-স্বজন-প্রতিবেশীদের অব্যাহত নেতিবাচক কথা আর উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে অন্ধকার নেমে আসা ফারজানার মুখের দিকে তাকানোর দুঃসাহস আমার ছিল না।
অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান ফারজানা বহিষ্কারের সময় ২য় বর্ষে ছিল। আর ওর ইমিডিয়েট ছোট বোন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল।
ওদের এলাকায় দুই বোনের সাফল্যে সাড়া পড়ে গিয়েছিল।
সেই মুহূর্তে ফারজানার বহিষ্কারাদেশ এলাকায় প্রবল গুঞ্জন তৈরি করে। লজ্জায় ওর বাবা বাইরে কাজে যেতেন না।
ফারজানা বার বার বলছিল—
“আপু, আব্বুকে কি বলব?
তাঁর সামনে আমি কিভাবে দাঁড়াব?”
কান্নারত ফারজানাকে আইনী লড়াই আর ছাত্রী সংস্থার পাশে থাকার কথা বললেও অব্যাহত পারিপার্শ্বিক চাপে আইনী লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে তার সাহস হয়ে ওঠেনি।
খুনি হাসিনার দুঃশাসনের সেই ভীতিকর দিনগুলোতে অন্য ভুক্তভোগীদের পক্ষেও সাহস নিয়ে আইনী লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিল। এছাড়া ছাত্রীরা মনে করছিল, আমরা যেহেতু কোন অন্যায় করিনি তাই শিক্ষকদের সাথে আলাপে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
কিন্তু না।
সীমার কাছ থেকে সাদা কাগজে— “আমি ছাত্রী সংস্থার সদস্যা ছিলাম”—মিথ্যা স্টেটমেন্টে সাক্ষর নিয়েও তাঁর একাডেমিক সার্টিফিকেট আটকে রাখে।
অবশেষে আইনী লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন সানজানা আফরিন বনি ও রওশন আরা খাতুন। তবে সে লড়াই সহজ ছিল না।
সদ্য বিবাহিতা রওশন আরা আপুর এই দুঃসংবাদ পরিবারকে জানানোর মত অবস্থা ছিল না। কেননা দরিদ্র বাবার আট সদস্যের পরিবারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রওশন আরা আপু ছিলেন আশার আলো। এই দুঃসংবাদ পরিবারের জন্য কতটা বেদনার হয়ে দেখা দেবে ভেবে আপু এটা গোপন রাখেন।
এরপর আইনী লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কাজ এগিয়ে নেওয়া অন্তঃসত্ত্বা রওশন আরা আপুর পক্ষে দিনে দিনে অসম্ভব হয়ে ওঠে।
তবু উপায়হীন।
অনাগত সন্তান পেটে নিয়ে দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা আর বিশ্রামহীনভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রুমের সামনে বসে থাকা হয়ে ওঠে রওশন আরা আপুর নিয়তি।
যেহেতু পরিবারের অন্য সদস্যদের বহিষ্কারের বিষয়ে জানাতে পারছিলেন না, তাই স্বামী ছাড়া সাহায্য করার মতোও কেউ ছিল না।
তিনি আপুকে এই দুঃসময়ে মানসিক সাপোর্ট দিয়ে গেছেন অবিরাম।
(চলবে)