অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন: নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-স্থাপনা

ফেনীর সোনাগাজীতে প্রভাবশালী মহল ছোট ফেনী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলছে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানালেও থেমে নেই বালু ও মাটি উত্তোলন। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা জানান, ছোট ফেনী নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করার ফলে বিল্ডিং ঘরে ফাটল ধরে গেছে এবং টিউবওয়েলে পানি নেমে গেছে। ভুগর্ভস্থ থেকে বালু ও মাটি চলে যাচ্ছে। এই এলাকায় প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি পরিবার ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। সামান্য যেটা বাকি রয়েছে তা এবারের বর্ষায় চলে যেতে পারে। ড্রেজার মেশিন সরিয়ে আমাদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবী জানাচ্ছি। এ কথা গুলো বলছেন,

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মিয়া বলেন, এখানে ঘর ছিল তা নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। জায়গা সম্পত্তি, গাছপালা পুকুর সব নদীতে চলে গেছে। নদী ভাঙ্গন ও মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙ্গে যাওয়ায় হুমকীর মধ্যে রয়েছি। নদী ভাঙ্গন রোধে সরকার ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা করেনি। এ বছর বাড়ি ঘর স্থাপনা থাকার আর কোন সম্ভাবনা নেই। এলাকার ষাট থেকে সত্তরটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার মেশিন চালু করলে, তখন প্রচণ্ড শব্দ ও কম্পনে বাড়ি ঘর কাঁপতে থাকে। ভাঙ্গন আতঙ্ক, বসতভিটা হারানোর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পরেন না এলাকার অনেকেই। নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মুছাপুর রেগুলেটর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে দফায় দফায় মানববন্ধন করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরলক্ষীগঞ্জ ছয়ানি এলাকায় প্রভাবশালী মহল বাঁকা নদী সোজা করার নামে ছোট ফেনী নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করার কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। বিষয়টি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন না করতে জানুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তার উল্টো। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন সরকারি আদেশ অমান্য করে এখনও বালু ও মাটি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চরমজলিশপুর ইউনিয়নে ছোট ফেনী নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। কেউ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজিরহাট রেগুলেটর নেই এবং মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙ্গে যাওয়ায় ছোট ফেনী নদীর দুই পাড়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধে সাড়ে ছয় কিলোমিটার কাজ ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছোট ফেনী, বড় ফেনী নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীর তের কিলোমিটার কাজ ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ষোল কিলোমিটার বাঁধের জন্য ১৭১ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে।

অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধ এবং নদী ভাঙ্গন রোধে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।