ইরানের পরমাণু কর্মসূচি আজ বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি জটিল ইস্যু হয়ে দাঁড়ালেও এর গোড়াপত্তন হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই সহায়তায় এবং শান্তির নামে।
আজ (২৫ জুন) বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৫৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেনহাওয়ার ‘অ্যাটমস ফর পিস’ নামে কর্মসূচি চালু করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি ভাগ করে নেওয়া। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৬০-এর দশকে তেহরানে একটি গবেষণা পারমাণবিক রিয়্যাক্টর বসাতে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র।
তৎকালীন ইরানের শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ছিলেন পাশ্চাত্যঘেঁষা ও আধুনিকীকরণে আগ্রহী। ফলে ওয়াশিংটনের কাছে ইরান ছিল এক আদর্শ মিত্র। ইরানি বিজ্ঞানীদের এমআইটি-সহ মার্কিন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরমাণু প্রযুক্তি প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। তবে এই শান্তির প্রযুক্তিই একসময় পরিণত হয় সম্ভাব্য যুদ্ধাস্ত্রের ভিত্তিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচক রবার্ট আইনহর্ন বলেন, আমরাই ইরানকে তাদের পরমাণু কর্মসূচির সূচনা উপহার দিয়েছিলাম। সেসময় পারমাণবিক অস্ত্র ছড়িয়ে পড়া নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ছিল না যুক্তরাষ্ট্র।
পরবর্তীকালে, ইরান নিজস্ব পরমাণু সক্ষমতা গড়তে তৎপর হয়। ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক চুক্তি হয়। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে ঘটে যায় ইসলামি বিপ্লব। পতন ঘটে শাহের। ক্ষমতায় আসে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ধর্মীয় নেতৃত্ব। নতুন শাসকগোষ্ঠী শুরুতে পারমাণবিক প্রকল্পে আগ্রহ দেখায়নি। খরচবহুল, পশ্চিমঘেঁষা ও ফেলে আসা শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় এটিকে বাতিলযোগ্য মনে করে।
কিন্তু ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধ। যেখানে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল। বদলে দেয় পরিস্থিতি। তখন ইরানের কাছে পরমাণু প্রযুক্তি ছিল বিলাসিতা নয় বরং আত্মরক্ষার উপায়। এই পর্যায়ে ইরান মুখ ফেরায় পাকিস্তানের দিকে। পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির জনক আবদুল কাদির খান চুপিসারে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজের ডিজাইন ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেন।
তবে যে প্রযুক্তিগত কাঠামো ইরানকে এসব গ্রহণ ও প্রয়োগের সক্ষমতা দিয়েছিল, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল অনেক আগেই যুক্তরাষ্ট্র। ২০০০-এর দশকের গোড়ায় বিশ্ব জানতে পারে ইরানের গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের কথা। ইরান দাবি করে, এটি এনপিটি-এর আওতায় বৈধ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সন্তুষ্ট হয়নি। এরপর থেকেই শুরু হয় নিষেধাজ্ঞা, নাশকতা ও গোপন যুদ্ধের পর্ব।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি কিছুটা স্থিতি আনলেও, ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের চুক্তি থেকে সরে আসার পর নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, আজ ইরানের সেই পরমাণু স্থাপনাগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের বোমার লক্ষ্য। যেগুলোর গোড়ার প্রযুক্তি একসময় ওয়াশিংটনেরই উপহার ছিল।