যিকরুল মাউত (মরণ মানসে)
মোঃ আরিফুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনাহীনতায় একদিন এ পৃথিবী থেমে যাবে কি কভু?
আপনার বিয়োগান্তে পৃথিবীরই বা কী আসে যায়!
খোদার চিরন্তন নিয়মে প্রকৃতিতে প্রতিদিনের মতোই সন্ধ্যা নেমে আসবে।
রাত্রি হলে চাঁদ-সেতারা আকাশে আলো ছড়াবে পূর্বের ন্যায়।
বিদঘুটে অন্ধকার আর নির্জনতার চাদরে ঢাকা বাতাসে ভেসে আসবে নাম না জানা কত শত বনফুলের গন্ধ।
দূরের গহীন অরণ্য থেকে ভেসে আসবে শিয়ালের হাঁক।
উত্তরের সেই খালের দিকে ধেয়ে চলা ঢালু সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা
মূর্তিময় তুতগাছের সারি আর বাঁশবাগান থেকে ভেসে আসবে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।
রাত্রি গভীর হলে প্রকৃতিতে নেমে আসবে এক সুনসান নীরবতা।
তারপর আলোকিত হবে দিগন্ত—ফুটে উঠবে সোবহে সাদিকের আভা।
দূরের কোনো এক মসজিদের মিনার থেকে করুণ সুরে ভেসে আসবে মুয়াজ্জিনের আজান।
কাকডাকা ভোরে পাখিরা আবার ছুটবে তাদের আপন ঠিকানায়।
অরুণরাঙা প্রভাতের আলোয় সবুজ ঘাসের উপর জমে থাকা শিশিরবিন্দু মিলিয়ে যাবে ধীরে ধীরে।
দক্ষিণা মৃদু হাওয়ায় ঘাসফড়িংগুলো এক ডাল থেকে আরেক ডালে দুলতে থাকবে।
ফিরে আসবে ব্যস্ত নগরীর চিরচেনা রূপ।
তারপর প্রিয়জনের বিচ্ছেদবেদনায় তিন দিনের শোকমগ্নতা কাটতে না কাটতেই চারদিক আবারও ভরে উঠবে কোলাহলে।
জোয়ার হবে, ভাটা হবে। নদী চলবে নিজের মোহনায়।
পথিক এগোবে আপন গন্তব্যে।
আপনার শূন্যতা সত্ত্বেও কেউ থেমে থাকবে না, কেউ আপনার কাজ গুটিয়ে নেবে না।
জগতের বাস্তবতা বড়ই রূঢ়।
এক প্রান্তে কেউ রাত কাটায় নির্ঘুম চোখে অশ্রুজলে,
আর অন্য প্রান্তে কেউ হারিয়ে থাকে তৃপ্তি ও শান্তির উল্লাসে।
এহেন বাস্তবতা স্বচক্ষে দেখে শখ-আহ্লাদ বলতে আর কী-ই বা থাকে!
এত স্বপ্নের বুনন কিসের জন্য, কার জন্যই বা এত আয়োজন?
যখন আমরা অন্তদর্শনে, জীবনের দর্পণে দুনিয়ার হাকিকত উপলব্ধি করি,
তখন মনে হয়—এই পৃথিবী কেবল মিথ্যা মায়ার ছাড়াছাড়ি।
লেখক পরিচিতি:
মোঃ আরিফুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।