ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে গাজায় ইসরাইলের বড় ধরনের সামরিক পরাজয়

৪৭১ দিনের টানা যুদ্ধের পর গাজায় যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তা ইসরাইলের জন্য এক ধরনের বড় বিপর্যয়। যুদ্ধের এত লম্বা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে কোনো স্থায়ী সামরিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদাল্লাহ জারেয়ি তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, “হামাসই ঠিক করছে কোন বন্দি কখন মুক্তি পাবে।” এটা যে কেবল ইসরাইলের সামরিক ব্যর্থতার কথা বলে তাই নয়, বরং তাদের কৌশলগত অবস্থান কতটা নড়বড়ে, সেটাও পরিষ্কার করে দেয়।

ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এ আমুস হারিয়েল লিখেছেন, “হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক ভারসাম্য সন্তোষজনক নয়, বরং তারা একপ্রকার বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।” এত দীর্ঘ যুদ্ধ চালিয়েও ইসরাইল গাজায় হামাসের উপস্থিতি মুছে দিতে পারেনি। বরং বাধ্য হয়েছে মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এবং যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের শর্ত মেনে নিতে। অথচ যুদ্ধ শুরুর সময় ইসরাইল বারবার ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করবে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এক মাস আগেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হবে না।” অথচ আজ তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এর অর্থ একটাই—ইসরাইল তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

হামাস দেখিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে সামরিক মাঠ—সবখানেই তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। গত দুই দশক ধরে তাদের সামরিক শক্তি ও গাজার সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ ইসরাইলের শক্তিশালী সামরিক কৌশলকে অকার্যকর করে তুলেছে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই হামাস যে মহড়া করেছে, তা ইসরাইলের জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর। ইসরাইলি রেডিও নিজেরাই স্বীকার করেছে যে গাজার কোনো অংশে হামাস তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায়নি। বরং এই সময়টা তারা নিজেদের শাসন আরও মজবুত করতে কাজে লাগিয়েছে।

একটা সহজ প্রশ্ন উঠছে—১৫ মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়েও ইসরাইল কেন গাজায় হামাসের বিকল্প কোনো শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি? কেন এত বড় সামরিক শক্তি নিয়েও হামাসের সামরিক যানগুলো এখনও গাজায় টিকে আছে? এর উত্তর একটাই—এটা ইসরাইলের জন্য স্পষ্টতই একটি সামরিক পরাজয়।

ইসরাইলি মন্ত্রীসভার সদস্য স্মোতরিচও এ বিষয়ে খোলাখুলি বলেছেন, “যদি বিষয়টি এখানেই শেষ হয়, তবে বলতে হবে ইসরাইল খুব ভয়াবহভাবে হেরেছে।”

সব মিলিয়ে, এই যুদ্ধের ফলাফল শুধু ইসরাইলের সামরিক ব্যর্থতা নয়, বরং তাদের কৌশলগত দুর্বলতারও প্রমাণ। এবং হামাসের এই প্রতিরোধ স্পষ্ট করে দিয়েছে, গাজার সাধারণ মানুষ এবং প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে কাজ করলে ইসরাইলের মতো শক্তিশালী দেশও তাদের ইচ্ছেমতো সব কিছু করতে পারে না।

তথ্য সূত্র: পার্স-টুডে

নিউজটি শেয়ার করুন