আমাদের কাছে কি আছে? – হুমাইয়া ছালছাবিল ফাইজা

বিশ্ব মুসলিম সমাজ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এই সংকটের মাঝেও আমাদের শক্তি সঞ্চয়ের উপায় হিসেবে ঠিক কী থেকে গেছে; যার দরুন ফিলিস্তিন থেকে সিরিয়া, সিরিয়া থেকে আফগান, এমনকি বাঙলাদেশের মাটিতে নেমে আসা জুলাইয়ের উত্তাল বিপ্লবের সিঁড়ি তৈরি করে চলেছে। তারই আখ্যান নিয়ে আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা মুক্তকবিতার মাধ্যমে।

|| আমাদের কাছে কি আছে? ||

/হুমাইয়া ছালছাবিল ফাইজা/

ওরা জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাদের কাছে কি আছে?’
না আছে বুক পকেটে জমিয়ে রাখা ক্ষমতার বড়াই,
নেই জমকালো রাতে, তারকাদের ভুলে গিয়ে, কৃত্রিম আলো জ্বালবার লড়াই,
না আছে ঠোঁটের কোণে পুষে রাখা পৈশাচিক বাঁকা হাসি,
নেই ভ্যালেন্টাইনে সেজে, একশো টাকার গোলাপের ‘ভালোবাসি’।
আমাদের কাছে কি আছে?
ওদের বলে দাও,
আমাদের আছে মরুদাহে পোড়া নবীপ্রেমিকের মন,
আছে না জানি কত ছন্দে গাঁথা, তিলাওয়াতের নিবেদন,
হেরাগুহায় ঝরা আশিকির রিজিক, হৃদগোলকে আজো তোলে ঝড়,
নিমেষেই চোখে মুক্তো ঝরে, মনে ভাসলে নববী, কেঁপে ওঠে কাতর অধর;
মাজলুমের আরশ ছোঁয়া আর্জি, মেঘে মেঘে রটিয়ে দেয়, পৃথিবী আমাদের নয়,
তারকা উজ্জ্বল সম্মোহন, কপালের সিজদার দাগে রয়, ইহলৌকিক জীবন হোক না ক্ষয়।

রাত হলে গভীর, হিমসিক্ত স্থবির;
জ্বালিয়ে আদিম লন্ঠন, মোরা দেখি আসমান অতি অসীম,
ভোরবেলার আলো ছুঁয়ে, মোদের চোখে নাচে স্বর্গীয় বৈভব,
সূর্য উঠলে মাথার ওপর, মোরা ছিনিয়ে নেই রোদ, পোড়াতে যাতনা সব।
ওহুদ প্রান্তরে জেগে ওঠা আসমানী প্রেম, খায়বারের মরুতে ফোটা রাঙা শিমুল,
এখনো বদরের হুঙ্কার ভেসে আসে কানে, জাগলে শেষ রাতে, ঝরে তরল শূন্যতা নিগূঢ়।
আমাদের আছে জুম্মাবারে জড়িয়ে থাকা, খুতবা শুনে টলমলে নয়নে,
বাড়ি ফেরবার সুকুন, যেন ঈমানে নয়া ফুল ফোটাবার মুকুল, নীরব রোদনে।

ওরা জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাদের কাছে কি আছে?’
নবজাতক শিশুর বুকের তাজা রক্তে ভেজা দানবের হাত আছে?
আছে কি নগ্ন সাহস?
গড়তে পারো কি? নারীর নারীত্ব গ্রাস করে নিয়ে, মাতৃত্বের নিলামে আন্দোলিত শহর!
সত্যি তো, আমাদের কাছে কি আছে?
শোনো তবে,
আমাদের আছে শিশুর কোমল হৃদয় জাগানো, আয়াত পাঠের ভঙ্গি,
নিত্যদিনের ক্লান্তি নামিয়ে তওবাই হয় মোদের সঙ্গী।
ঘরের চতুষ্কোণের রাজ্যে শ্রেয়সী প্রিয়ার মোহন,
মনে হয় প্রখর রৌদ্রতাপের মৌসুমে, শিশিরবিন্দুর লেপন।
কাওয়াম রূপে প্রেমময়ের কন্ঠে, বাজে যখন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা’,
প্রেম যেন হায় অপলক চায়! দৃষ্টি ফেরায় না কিছুতেই, নামায় বসন্তের জ্যোৎস্না মাখা সন্ধ্যা।

মরুভূমির বারুদ পুষে রেখে, মোরা সিজদারত কপালে লিখি বিদ্রোহ,
অরুণাভ গোধূলি বুকে বেঁধে করি যিকির, ভুলতে বসি দুনিয়াবী মোহ,
ফেরদৌসের মায়াঘন বৈঠকে, কল্পনা করি নিজের একটুখানি স্থান,
ওইটুকু স্বপ্ন আঁকড়ে জ্বালাময়ী এই জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়, অস্তিত্ব যতই হোক ম্লান।
ওরা কি জানে? আমাদের কাছে যা আছে, তা কখনো ফুরোয় না,
একলা ফেলে দুঃসময়ে, কোনোদিন ছেড়ে দিয়ে যায় না;
ওরা ঠিক জানে, রুকুর আবেশে সাজানো সুখ, খালি চোখে দেখা যায় না,
প্রভুর কাছে যারা প্রাণ রেখে দেয়, বস্তুবাদ তাদের ছুঁতে পারে না।
জিবরাঈলের আনা ওহীর আলোয়, আলোকিত কারাগার, তোমাদের প্রহসনে,
আমাদের কাছে আছে সিদরাতুল মুনতাহার সবুজ, আল কাহফের দারসখানাতে।

নিউজটি শেয়ার করুন