যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ৩ লাখ ভারতীয় শিক্ষার্থী কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে

যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত প্রায় ৩ লাখ ভারতীয় শিক্ষার্থী কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে একটি নতুন বিল প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ‘অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং বা ওপিটি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাতিল করতে চাইছে। এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক স্নাতকদের, বিশেষত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতক্ষেত্রের শিক্ষার্থীদের, স্নাতক হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছর পর্যন্ত কাজের সুযোগ করে দেয়।

দ্য ইকোনমিক টাইমস এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যদি এই বিলটি পাস হয়, তবে শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে এইচ-১বি ওয়ার্ক ভিসা জোগাড় করতে হবে অথবা দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হবে।

ওপেন ডোরস ২০২৪ এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভারতীয় শিক্ষার্থী ওপিটি-এর জন্য যোগ্য ছিলেন। এই প্রস্তাবিত পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

ওপিটি শিক্ষার্থীদের স্নাতক হওয়ার আগে বা পরে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি দেয়। এটি ১২ মাসের কাজের অনুমোদন প্রদান করে এবং ইস্টিম শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ মাসের বর্ধিতকরণসহ মোট ৩৬ মাসের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। এফ-১ এবং এম-১ ভিসাধারী শিক্ষার্থীরা এখন এইচ-১বি স্পনসরশিপ নিশ্চিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন অথবা কানাডা ও ইউরোপের মতো বিকল্প গন্তব্য বিবেচনা করছেন।

এই বিলটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিরোধী মনোভাব বাড়ছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পোস্ট-স্টাডি কাজের সুযোগ কমানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ এটি।

বাড়ছে আতঙ্ক:
এই আশঙ্কার কারণে ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

জানা গেছে, কর্নেল, কলম্বিয়া এবং ইয়েলের মতো বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত দেশ না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উপর পড়তে পারে, যারা এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভরশীল। আপাতত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে আসছে।

ফরেন অ্যাডমিটসের প্রতিষ্ঠাতা নিখিল জৈন ইটি-কে জানিয়েছেন, মার্কিন কলেজগুলো আইনি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করছে এবং শিক্ষার্থীদের বিকল্পগুলো নেভিগেট করতে সহায়তা করার জন্য সহায়তা নেটওয়ার্ক তৈরি করছে।

কেন এই কর্মসূচিগুলো গভীর তদন্তের মুখে?
২২ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে মার্কিন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির শুনানিতে সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের পলিসি স্টাডিজের পরিচালক জেসিকা এম. ভন ওপিটি এবং সিপিটি-এর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি এগুলোকে কংগ্রেস কর্তৃক অননুমোদিত এবং জাল ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুকারী ‘ডিপ্লোমা মিল’-এ পরিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, এগুলো হয় বাতিল করা উচিত, না হয় আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’ ভন উল্লেখ করেন যে এই কর্মসূচিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তম গেস্ট ওয়ার্কার জনসংখ্যা তৈরি করেছে, যেখানে ৫ লাখ ৪০ হাজার সাবেক শিক্ষার্থী যথাযথ তত্ত্বাবধান ছাড়াই কাজ করছেন।

২০২২ সালে, ওয়াশটেক নামক একটি শ্রমিক জোট একটি মামলা করে দাবি করে যে ওপিটি নিয়োগকর্তাদের এইচ-১বি ভিসার সীমা এড়াতে সাহায্য করে, যা মার্কিন শ্রমিকদের ক্ষতি করে।

ওপিটি-তে কোনো সীমা নেই:
পরিসংখ্যান চমকপ্রদ। ২০২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৮২ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ওপিটি, ইস্টিম ওপিটি এবং সিপিটি-এর অধীনে কাজ করেছেন। এইচ-১বি ভিসার বিপরীতে, যার একটি বার্ষিক সীমা রয়েছে, এই প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যার কোনো সীমা নেই- ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থী ওপিটি-তে, এক লাখ ২২ হাজার ১০১ জনি স্টিম ওপিটি-তে এবং এক লাখ ৪০ হাজার ৮২৯ জন সিপিটি-তে ছিলেন।

এই নতুন বিল ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করেছে এবং তাদের কর্মজীবনের স্বপ্নকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।