
ছাত্রদলের সাম্প্রতি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব। তিনি বলেছেন, গত ১৫ বছর খালেদা জিয়া যখন ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুমের স্বীকার হয়েছিলেন, ভুয়া মামলায় জেল খেটেছেন- তখন ছাত্রদল কি আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পেরেছিল? আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কোনো বড় আন্দোলন যেটা সরকারকে নাড়া দিতে পারবে— এমন কোনো আন্দোলন কি করতে পেরেছিল ছাত্রদল? যদি না হয়,তাহলে ছাত্রদলের পেশিশক্তি বিএনপির আলাদা করে কোন কাজে লাগে? বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ই যদি পেশিশক্তি কাজে না লাগে, তাহলে অন্য সময় এর উপযোগিতা তো আরো কম।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা গালিব ওই পোস্টে আরও লেখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিএনপি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল। স্বাভাবিক হিসাবে আগামী নির্বাচনে বিএনপিরই জেতার কথা। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন এই নির্বাচনে জিততে বিএনপির আলাদা করে পেশীশক্তির প্রয়োজন নাই। বিএনপি যদি তার স্বাভাবিক ভোটারদের ধরে রাখতে পারে, তাইলেই নির্বাচনে জিতবে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের পেশিশক্তি দেখাইয়া ক্যাম্পাসে ক্ষমতা দেখানতে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক লাভ তো দেখি না। বরং তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব আরো বাড়বে। ছাত্রদল বিএনপির জন্য সম্পদ না হয়ে বোঝা হয়ে যেতে পারে।
ছাত্রদলের ওপর নির্ভরতা বিএনপিকে নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে মন্তব্য করে তিনি লেখেন, এই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ না। বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতায় গিয়ে পাঁচ বছর সরকার ঠিকমতো চালানো; গণঅভ্যুত্থানের পরে মানুষের যে নতুন আকাঙ্ক্ষা সেটা মিটানো; একটা নতুন প্রজন্ম যারা পলিটিক্যাল হয়ে বড় হইতেছে তাদের নেতৃত্ব দেওয়া। পুরাতন আমলের পেশিশক্তি বেইজড ছাত্রদল দিয়ে কোনোভাবেই সেই কাজ হবে না। বিএনপির তাই ছাত্রদলের কাঠামো আর কাজ বদলানোর দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।
বিএনপির উচিত ছাত্রদলকে নির্বাচনি প্রচারণার জন্য কাজে লাগানো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোন কাজে ব্যস্ত না রাখলে আকামই করবে। বিএনপির উচিত ছাত্রদলকে নির্বাচনি প্রচারণার জন্য কাজে লাগানো। বিশেষ করে অনলাইনে ৩১ দফার পক্ষে প্রচার করার দায়িত্ব ছাত্রদলকে দিতে পারে। এখনকার নির্বাচনে অনলাইন প্রচারণা বিশাল ভূমিকা পালন করবে। আলাদা আলাদা টিম করে দিলে যেই টিমগুলো ভালো করবে, তাদের লিডারদের পরে ধীরে ধীরে নেতৃত্বে নিয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে কনস্ট্রাকটিভ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরির একটা সিস্টেম তৈরি হবে। ’
তরুণ এই শিক্ষক ওই পোস্টে আর লেখেন, পেশিশক্তি দেখাইয়া যদি ক্যাম্পাসে টিকে থাকাই যাইত, তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভাপতি, সেক্রেটারির রুম পুড়ত না। হাসিনার পতনের আগেই কিন্তু ছাত্রলীগের পতন হয়েছিল। ৯০ এর দশকের রাজনীতিতে পেশিশক্তি ওয়ালা ছাত্র সংগঠন ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন ছিল। এখন ২০২৫। সেই পুরানা মডেল আর কাজ করছে না। বিএনপি আর ছাত্রদল এইটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই জাতির মঙ্গল।