
জুলাই বিপ্লব: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ও অমর সংগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখা একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছে। প্রেস রিলিজে জানানো হয়,
আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ রহমত ও করুণায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। ১৭ বছরের স্বৈরাচারী, জুলুম এবং ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ন্যায়, ইনসাফ এবং উন্নয়নের এক নতুন স্বপ্নের দুয়ারে প্রবেশ করেছে। গত দুই দশকের অধিকারহীনতা, ভয়-ভীতি, দুর্নীতি, লোপাট ও লুটপাটের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এ বিপ্লব বাংলাদেশের মানুষের ঐক্য, শক্তি এবং সংগ্রামের এক বড় উদাহরণ।
আজকের এই মুহূর্তে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার সূর্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের। ১৯৭১ সালে যারা প্রাণের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন।সেই সাথে স্বরণ করছি জুলাই আন্দোলনের বীর শহীদদের যারা ফ্যাসিবাদের বুলেটের সামনে বুক উজার করে দিয়ে নিজেদের প্রান উৎসর্গ করার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের তখতে তাউসকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে, কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বিপ্লব আমাদেরকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে, যেখানে দেশ ও জনগণের রাজনীতি, নৈতিকতা, এবং গণতন্ত্রকে আবার জীবন্ত করা সম্ভব হয়েছে।
তবে স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রে যে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এর কথা বলা হয়েছিল তার সুফল বাংলার জনগন ভোগ করতে পারেনি।দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরা জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে, আমাদের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করেছে। আমাদের অধিকার নিয়ে চলেছে মাৎসান্যায়। তথাপি ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সেই স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পতন নিশ্চিত করেছে। দেশের জনগণ আবার অধিকার ফিরে পেয়েছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, এবং আমরা আশা করছি এটি আমাদের দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি মাইলফলক হবে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে ছাত্রদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ছাত্রসমাজ বিভিন্ন সময়ে স্লোগানমুখর হয়েছে ন্যায়ের পক্ষে এবং বজ্রাঘাত হেনেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। বিশেষত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাতীয় জীবনে ছাত্রদের নৈতিক এবং আদর্শিক নেতৃত্ব দিয়ে ভূমিকা রেখে আসছে । ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, সততা, দেশপ্রেম এবং মানবিক মূল্যবোধ তৈরিতে কাজ যাচ্ছে নিরলস, যেন ছাত্রসমাজ দেশের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিট প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু করা হয় উচ্চশিক্ষার বর্ধিত চাহিদা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মেটানো সম্ভব না হওয়ার কারণেই এই সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোতে গবেষনা খাতে যথাযত বরাদ্দ না থাকার কারনে যেই মানসম্মত দক্ষ জনসম্পদ হিসাবে ছাত্রদের গরে ওঠার কথা ছিল তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তার কর্মনিতিগুলো এমন ভাবে সাজিয়েছে যে একজন ছাত্র তার গবেষনা ধর্মী কাজের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, নৈতিক ও মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসাবে গরে উঠবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সব সময় বিশ্বাস করে ছাত্ররাজনীতি কখনও ক্ষমতার জন্য নয়, বরং এটি হতে হবে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের বাতিঘর। হবে আদর্শের মঞ্চ, যেখানে প্রত্যেক ছাত্র নিজের চিন্তা এবং মতামত উপস্থাপন করবে স্বাধীনভাবে। ক্যাম্পাসগুলোতে লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি, দলীয় স্বার্থ এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের পরিবর্তে, ছাত্ররা মুক্ত, সৎ এবং নৈতিক রাজনীতির মাধ্যমে উপস্থাপন করবে নতুন আইডিয়া ও উদ্ভাবনী চিন্তা।যা জাতি এবং দেশকে দেখাবে আলোর পথ।আর ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজের সৃজনশীলতা, শিক্ষা এবং নৈতিকতা বৃদ্ধির জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বিশেষভাবে উজ্জ্বীবিত।যারা স্বপ্ন দেখে নিজেদের নিয়ে, শিক্ষাঙ্গন, দেশ এবং সমাজ গঠনে তারা দৃঢ় প্রত্যয়ী।জুলাই বিপ্লব পরবর্তী তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সেই গঠনমূলক প্রত্যয় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হয়েছে।এই প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে ছাত্রশিবির তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে পাশে দাড়িয়েছে বিগত দিনে।
২০০৯ সালে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক বাধা-বিপত্তি, প্রতিকূলতা মাড়িয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির তার পথচলাকে অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ট্যাগিং মাধ্যমে বিমানবিকরন করা হয়েছে এই অব্যাহত পথ চলায় জেল-জুলুম, শারীরিক নির্যাতন-ব্রাশ ফায়ারকে সঙ্গি করে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে নিরন্তর ছুটে চলেছে। এসব সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা এবং শক্তির উৎস। ছাত্রশিবির তাই তরুণ প্রজন্মের মাঝে সাহস, শক্তি ন্যায়বিচার এবং দেশপ্রেমের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করছে। ছাত্রশিবির তাদের নৈতিক উন্নয়ন ও দক্ষ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। শিবিরের মূল লক্ষ্য শুধু ছাত্রদের সংগঠিত করা নয়, বরং তাদের সঠিক দিশায় পরিচালিত করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।আমরা চাই প্রতিটি ছাত্র তার জীবনের লক্ষ্য অর্জন করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই নতুন বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিহার্য। এই মহতি দায়িত্ব তাদের জন্য, যারা সমাজে পরিবর্তন আনার সক্ষমতা রাখে। তাদেরকে সঠিক দিশায় পরিচালিত করার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর, ন্যায়বিচারপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখা তাই ছাত্রদের নৈতিক এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে একাধিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, যেমন ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, এবং সেমিনার ও কর্মশালা।
আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সময়ে দেশের শিক্ষার পরিবেশ ও সঠিক সুযোগ নিশ্চিত করা ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদের জন্য সঠিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ এবং টিউশন ফি কমানোর জন্য কাজ করছে ছাত্রশিবির। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকতর স্কলারশিপ সুবিধা প্রদান এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সহজলভ্য করতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি।
ইসলামী ছাত্রশিবির শুধু ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত ভূমিকার পাশাপাশি তাদের মানসিক, সামাজিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যেও গুরুত্ব দেয়।ছাত্রদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচি, মেডিকেল ক্যাম্প এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, যাতে তারা শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারে।
জুলাই বিপ্লবের সময় দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি ন্যায্য সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেদের অবদান রেখেছেন। তাঁদের সাহসী ভূমিকা এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে অমর হয়ে
থাকবে।
সাজ্জাদ হোসেন গাইবান্ধার সাঘাটার একজন তরুণ যোদ্ধা। তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়া থানা পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।হত্যা করার পর তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। তার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ দেশের ছাত্র আন্দোলনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন । আসিফ হাসান, সাতক্ষীরার দেবহাটা থেকে আসা এক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছাত্র, ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে ঢাকার উত্তরা এলাকায় পুলিশের গুলিতে বুকে আঘাত পেয়ে শহীদ হন তিনি নর্দান ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। মোঃ সেলিম তালুকদার, ঝালকাঠির নলসিটি এলাকার বাসিন্দ, তিনি বিজিএমইএ এর ছাত্র ছিলেন । তিনি ৩১ জুলাই ২০২৪ সালে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন।৫৩টি বুলেটের আঘাতে তিনি ১৪ দিন আইসিইউতে থেকে শেষ পর্যন্ত জীবন উৎসর্গ করেন। আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ, টাঙ্গাইলের পারকুল্লাহ এলাকার বাসিন্দা,তিনি মানারাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে সাভারের বাইপাইল এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। শাকিল পারভেজ, লক্ষ্মীপুরের এই তরুণ উত্তরা এলাকায় ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শহীদ হন তিনি মানারাত ইউনিভার্সিটির শহীদ ছিলেন। আব্দুল্লাহ আল-আবির, বরিশালের বাবুগঞ্জের বাসিন্দা ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (NSU) ছাত্র। তিনি ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। ইরফান ভূঁইয়া, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) ছাত্র। তিনি ১৮ জুলাই যাত্রাবড়ীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। রাশেল মাহমুদ, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। রামপুয়াতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। রাব্বী মিয়া, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির একজন সাহসী ছাত্র।তিনি যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন এবং পরে শহীদ হন।ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, যশোরের ঝিকরগাছার বাসিন্দ। তিনি ২৬ জুলাই ২০২৪ সালে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে শহীদ হন তিনি সাউথ ইষ্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। রবিউল ইসলাম, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তিনি উত্তরা এলাকায় সন্ত্রসীদের উপর্যপুরি আঘাতে শহীদ হন।রাকিব হাসান, বরিশালের বাবুগঞ্জের এক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ। ঢামেক এরিয়ার গুলিবিদ্ধ হন। তিনি সাউথ ইষ্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। আলফ ইকবাল, ঢাকার একজন নিবেদিত প্রাণ ও (IUB) প্রাক্তনছাত্র।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখা তার সাহসী সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। কোনো জুলুম-নির্যাতন আমাদের পথচলা থামাতে পারেনি, আর ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।