‘ক্যাডার’ এবং ‘নন-ক্যাডার’ নামক অভিধা বিলুপ্ত করে সেবার ধরন অনুযায়ী ‘গুচ্ছ সার্ভিস’ পদ্ধতি চালুর দাবি জানিয়েছেন নন-ক্যাডাররা।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন তারা। ‘বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী গণকর্মচারী পরিষদ। এই পরিষদ নবম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডভুক্ত গণকর্মচারী সমন্বয়ে গঠিত।
তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রের বেসামরিক সব সরকারি কর্মচারীর (১-২০তম গ্রেড পর্যন্ত) পরিচিতি ও সরকারি সুযোগপ্রাপ্তির মানদণ্ড হবে গ্রেডভিত্তিক, এ লক্ষ্যে ‘ক্যাডার’ এবং ‘নন-ক্যাডার’ নামক বৈষম্যমূলক অভিধা বিলুপ্ত করে সেবার ধরন অনুযায়ী ‘গুচ্ছ সার্ভিস’ পদ্ধতি চালু করতে হবে; ক্যাডার ও নন-ক্যাডারভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তে সার্ভিসভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত এবং বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থায় প্রেষণ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ রহিত করে নিজ নিজ দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্য হতে মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে; ‘সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা কমিশন’ নামে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে, এ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি সব সার্ভিসের জন্য ন্যায্যতার ভিত্তিতে পদ সৃজন, পদ উন্নীতকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং যৌক্তিকীকরণের স্বাধীন দায়িত্ব পালনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকবে।
প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে- স্থায়ী পে-কমিশন গঠন করতে হবে ও নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর কমিশন কর্তৃক নতুন পে-স্কেল ঘোষণা, পে-স্কেলের ধাপগুলো হ্রাস বা যৌক্তিকীকরণ ও প্রতিবছর সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করতে হবে; ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে, পদোন্নতি না পেলে জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫-এ ১৩(১)-এ প্রান্ত পূর্ণ বেতন প্রাপ্তির শর্তাবলী অনুযায়ী চাকরির ৫ বছর পূর্তিতে ৬ষ্ঠ গ্রেড, ১০ বছর পূর্তিতে ৫ম গ্রেড ও ১৪ বছর পূর্তিতে ৩য় গ্রেডের বেতনস্কেল প্রদান করতে হবে; দেশে ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা, মৌলিক ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের সুযোগ সরকারি সব সার্ভিসের জন্য মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনীয়তার নিরিখে উন্মুক্ত রাখতে হবে; ৯ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদের সব সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ও জনসেবা প্রদানে অধিকতর প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে এবং ৯ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদের সব সার্ভিসের কর্মকর্তার জন্য প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সব সার্ভিস লজিস্টিকস নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা ইমদাদ আলী বিশ্বাস। প্রস্তাবনা পেশ করেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপপরিচালক মিজানুর রহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা কর্মকর্তা ইমরান হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুর রহমান প্রমুখ।
এসব প্রস্তাব মেনে নেওয়ার দাবিতে কোনো আন্দোলনে যাবেন কিনা এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আন্দোলনের রূপরেখা করিনি। আমরা চাই, এই সরকার স্থিতিশীলতা অর্জন করুক। সেজন্য প্রথম থেকেই অপেক্ষা করছিলাম, সংস্কার কমিশনে তারা আমাদের ডাকবেন। কিন্তু এতদিনেও আমরা ডাক পেলাম না। সেজন্য তাদের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছাতে চাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী গণকর্মচারী পরিষদ প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি কিভাবে জানতে চাইলে তারা বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেখলাম জনগণের সরকার আসল, তারা পুরোনো ব্যবস্থাকে ছিঁড়ে ফেলতে চাইল। চিন্তা করলাম, শুধু জনসেবাকে নিশ্চিত করতে গেলে আমাদের রিফর্ম করা দরকার। আমাদের সুযোগ-সুবিধা দেখতে হবে। এটি নিশ্চিত করা না গেলে আমরা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারব না। সেটির প্রেক্ষিতেই এই প্ল্যাটফর্মের সৃষ্টি।