বাংলাদেশে এনার্জি, আইসিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি, গ্যাস, কনস্ট্রাকশন, রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সৌদি আরবের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
সোমবার (১৬ জুন) পবিত্র কাবাঘরের সন্নিকটে মক্কা ক্লক টাওয়ার এর মারওয়া রায়হান হোটেলের আল সোরফা হলে ‘সৌদি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ, স্বার্থ সংরক্ষণ ও করণীয়’ সম্পর্কে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি আরব এন্ড কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় মক্কা চেম্বার অফ কমার্স, জেদ্দা চেম্বার অফ কমার্স, মদিনা চেম্বার অফ কমার্স, রিয়াদ চেম্বার অফ কমার্স এর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সভায় সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা যৌথ উদ্যোগ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অফ এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এসএবিসিসিআই) এর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মাকতাবাতুল আখতার এর সিইও হাফেজ মুফতি আহমেদ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেদ্দা চেম্বার কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বোর্ড সদস্য শেখ ওমার বিন আব্দুল হাফিজ মক্কী।
সভায় এসএবিসিসিআই এর আহ্বায়ক আশরাফুল হক চৌধুরী মূল প্রবন্ধে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভিডিও পরিবেশ এবং দুই দেশের সম্ভাব্য লাভের দিক তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল জেদ্দার কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সৈয়দা নাহিদা হাবিবা। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এর নিউইয়র্ক প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ও সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী আহাম্মেদ এ ফারুকী, জেদ্দা চেম্বার এর বোর্ড অফ ডিরেক্টর আব্দুল্লাহ রাদাহ আল-হারতি, সৌদি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ আল ওয়ান আল মোস্তাহিদার চেয়ারম্যান শেখ ফৌজান আল হারসি, ইলসা ইন্টারগ্রেটেড কোম্পানির সিইও এবং রিয়াদ চেম্বারের বোর্ড অফ ডিরেক্টর মিস্টার শাহ জালাল। বারাকাত গ্রুপ অফ কোম্পানির সিইও আব্দুল আজিজ বিন আসাদ আল সুবায়ি, মারজান ফ্যাশন এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও নেসার আহমেদ, শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী, মক্কার শীর্ষ স্থানীয় হোটেল গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার ইন্ডাস্ট্রিজ এর আহ্বায়ক আশরাফুল হক চৌধুরী উপস্থিত বিভিন্ন চেম্বার এর প্রতিনিধি ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ সব সময় সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। দুটি দেশের ব্যবসায়ীদের পরস্পরের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সেতু বন্ধনের মাধ্যমে উভয় দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করা। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে।
তিনি সৌদি আরবের প্রতিনিধি ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান নোবেল লরিয়েট ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে দুই দেশই লাভবান হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) উদ্যোগ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার বিভিন্ন দেশের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে, যাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা নির্বিঘ্নে বিনিয়োগ ও মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
জেদ্দায়স্থ বাংলাদেশ কনসোলেট এর কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদ এবং বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল অফিস জেদ্দায় চেম্বার প্রতিনিধিদের ভিজিট করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দূতাবাস, কনসুলেট সৌদি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতার করে আসছেন এবং ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও যৌথ উদ্যোগে যেকোন ধরনের সহযোগিতা কনসুলেট এর পক্ষ থেকে করা হবে বলেও উপস্থিত চেম্বার প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ ওমর বিন আব্দুল হাফিজ মক্কী জানান, ব্রিটিশ উদ্যোক্তার করাইনু কোম্পানির মাধ্যমে হেভি ভিহাইকেলের জন্য ব্যাটারি আমদানি করতেন তিনি। কিন্তু সেই ব্যাটারির উৎস যে বাংলাদেশ তা জানার পর তিনি সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এতে করে মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই ব্যাটারি আমদানির সুযোগ পেয়ে তিনি খরচ কমাতে পেরেছেন বলেও জানান।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য এবং তথ্য ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, এস.এ.ইন্টারন্যাশনাল এর কর্ণধার শওকত আলি। অনুষ্ঠানে রিয়াদ, জেদ্দা, মক্কা ও তায়েফ- থেকে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের একত্রিত করে তৈরি হচ্ছে এক নতুন প্ল্যাটফর্ম, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজার ও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।
মক্কার ক্লক টাওয়ারে অনুষ্ঠিত নেটওয়ার্কিং মিটিং-এ অন্যান্য কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতার এ ধারা ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেন বিভিন্ন চেম্বারের প্রতিনিধিরা।