গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রোববার পর্যন্ত এত সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের অবসানের কোনো লক্ষণ না থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের নতুন করে যুদ্ধ শুরু করা এবং কঠিন দিনের সতর্কতা জারি করার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

;

সিএনএন জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪১ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে মৃতের সংখ্যা ৫০,০২১-এ পৌঁছেছে। গাজার কর্তৃপক্ষ হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করার সময় বেসামরিক ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের মতে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়াও, হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানকে “অসঙ্গতিপূর্ণ ও মিথ্যা” বলে অভিহিত করেছে। আইডিএফ দাবি করেছে, মন্ত্রণালয় সংঘাতের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন মৃত্যু, যেমন প্রাকৃতিক মৃত্যুও রেকর্ড করে। আইডিএফ আরও জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে বেসামরিক ক্ষতি কমানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে চলেছে।

এই সপ্তাহে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফের শুরু করার পর থেকে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। মঙ্গলবারের বিমান হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলোর মধ্যে একটি। বুধবার ইসরায়েল গাজায় নতুন করে স্থল অভিযান  শুরু করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের এই আক্রমণে ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। হামাস ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির “নতুন ও বিপজ্জনক লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে। তারা সম্প্রতি স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার কথা বললেও যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে।

গাজার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তা অনুযায়ী ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজার কিছু অংশে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে তাদের উপস্থিতি বজায় রাখবে। তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজায় নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছেন।

জাতিসংঘ ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে। স্বাধীন একাডেমিক গবেষণায়ও অনুমান করা হয়েছে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তবে সিএনএন বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম স্বাধীনভাবে এই সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি, কারণ ইসরায়েলি সরকার বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় স্বাধীনভাবে প্রবেশ করতে দেয় না।