ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দেওয়া ‘যুদ্ধবিরতির শর্ত’ প্রত্যাখ্যান করল যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত আলোচনায় দেশটির স্বাধীনতাকাম সংগঠন হামাসের দেওয়া শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন প্রশাসন এই শর্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং বলেছে যে, এটি আলোচনার উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে, দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চলছে। খবর বিবিসি।

মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও হামাসের শর্ত

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার শর্ত হিসেবে হামাস প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা মার্কিন ও ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি দেবে এবং চারজন জিম্মির মরদেহ ফেরত পাঠাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই শর্ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ হামাসের প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটি আলোচনার উপযুক্ত নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারে না।

হামাসের শর্ত প্রত্যাখ্যানের পরপরই ইসরায়েল গাজায় হামলা আরও তীব্র করেছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের বর্বর হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কর্মীও ছিলেন।

গাজায় মানবিক সংকট চরমে

যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। ফলে গাজার পরিস্থিতি চরম মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে জানিয়েছে যে, গাজার ১০ লাখের বেশি মানুষ মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইউনিসেফের এক মুখপাত্র বলেন, গাজায় শিশুরা এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে। জরুরি চিকিৎসা ও পুষ্টিহীনতার কারণে তাদের অনেকের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে গাজার জনগণের ওপর ‘মানবিক অবরোধ’ সৃষ্টি করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন।

ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণ সংকট ও গোয়েন্দা বিভাগে রদবদল

হামাসের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার পুনর্গঠনের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো যায়। তবে তার এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

হামাসের কৌশলী আক্রমণ ও ইসরায়েলের ব্যর্থতা

এরই মধ্যে সাবেক ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হেরজি হালেভির একটি অডিও ফাঁস হয়েছে, যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে, হামাস ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলকে কৌশলে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল।

অডিওতে আরও বলা হয়, হামলার আগে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ধরনের দুর্বলতার প্রমাণ। এই স্বীকারোক্তির ফলে ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং নেতানিয়াহুর সরকার আরও চাপে পড়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আলোচনা চললেও পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। হামাসের দেওয়া শর্ত প্রত্যাখ্যানের ফলে যুদ্ধবিরতির আশা ক্ষীণ হয়ে গেছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের বর্বর হামলা ও মানবিক সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় দেশটির সরকারও নতুন সংকটের মুখে পড়েছে। সবমিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ছে, যা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।