রোজার স্বাভাবিকতা: যেসব কাজে রোজা ভঙ্গ হয় না
এমন কিছু কাজ আছে, যার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অথচ অনেকে এগুলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করে। ফলে এমন কোনো কাজ হয়ে গেলে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করে। পক্ষান্তরে কেউ কেউ এসব কাজ পরিহার করতে গিয়ে অযথা কষ্ট ভোগ করে। এসব বিষয়েও সকল রোজাদার অবগত হওয়া জরুরি।
১. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোজা ভঙ্গ হবে না। তেমনি বমি কণ্ঠনালীতে এসে নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না।
(তিরমিজি: ১/১৫৩)
২. শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভাঙ্গবে না। ‘কাতাদাহ (রাহ.)’ থেকে বর্ণিত, “রোজাদারের তেল ব্যবহার করা উচিত, যাতে রোজার কারণে সৃষ্ট ফ্যাকাশে বর্ণ দূর হয়ে যায়”।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/৩১৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩)
৩. স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গবে না। ‘আবু সাঈদ খুদরী (রা.)’ থেকে বর্ণিত, “(নবী কারীম (সা.)’-এর মুখ ভরে বমি হল। তিনি তখন বললেন- তিন বস্তু রোজাভঙ্গের কারণ নয়: বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ”।
(সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৪/২৬৪)
৪. যদি রোজাদারের গোসল করার সময় অথবা বৃষ্টিতে ভেজার সময় কানের মধ্যে অনিচ্ছায় পানি চলে যায়, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে রোজা নষ্ট হবে না।
(ফাতহুল কাদির ২/৩৪৭)
৫. সুস্থ অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান, অচেতন বা পাগল হয়ে যায়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। ‘নাফে (রাহ.)’ থেকে বর্ণিত, “‘আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)’ একদিন নফল রোজা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে যান, কিন্তু এ কারণে তিনি রোজা ভাঙেননি”।
(সুনানে কুবরা বায়হাকি ৪/২৩৫)
৬. কুলি করার পর পানির অবশিষ্ট আর্দ্রতা থুথুর সঙ্গে গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
(হিন্দিয়া ১/২০৩)
৭. কফ গলার মধ্যে চলে যায়, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই।
(দুররে মুখতার ৩/৩৭৩)
৮. মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/৩৪৯)
৯. রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোজা স্মরণ হওয়ামাত্র পানাহার ছেড়ে দিতে হবে।
(মুসলিম ১/২০২)
১০. রোজা অবস্থায় আতর বা ফুলের ঘ্রাণ নিলেও কোনো সমস্যা নেই।
(মারাকিল ফালাহ, ৩৬১)
১১. রোজা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত মুখের মধ্যে ধুলাবালি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না।
(দুররে মুখতার ৩/৩৬৬)
১২. অতিরিক্ত গরম বা পিপাসার কারণে যদি গোসলের মাধ্যমে শরীরকে ঠাণ্ডা করা হয়, তাহলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
(হিন্দিয়া ১/২০৩)
১৩. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে পেটের মধ্যে না গেলে রোজা ভাঙবে না।
১৪. কোনো খাদ্যদ্রব্য বুট বা ছোট ছোলার কম পরিমাণ যদি দাঁতের সঙ্গে লেগে থাকে ও গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না।
(হিন্দিয়া ১/২০২)
১৫. রোজা অবস্থায় মিসওয়াক (কাঁচা বা পাকা ডাল যাই হোক) করলে রোজার কোনো সমস্যা নেই। এমনকি ইফতারের পূর্বে করলেও অসুবিধা নেই।
(বোখারি: ১/২৫৯)