পর্ব ০২ – আত্মবিশ্বাসী বক্তা হওয়ার কৌশল

বড় পরিসরে কথা বলতে গেলে অনেকেরই ভয় লাগে। হাত-পা কাঁপতে শুরু করে, গলা শুকিয়ে যায়, মনে হয় যেন সবাই ভুল ধরার অপেক্ষায় আছে। অথচ একজন ভালো বক্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো আত্মবিশ্বাস। যে যত দৃঢ়ভাবে নিজের কথা তুলে ধরতে পারে, তার বক্তব্য তত বেশি প্রভাব ফেলে।

কিন্তু কীভাবে সেই আত্মবিশ্বাস অর্জন করা যায়? কীভাবে ভয় কাটিয়ে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব? ইসলাম আমাদের এই বিষয়ে অনেক সুন্দর দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

১. ভয় পাওয়া স্বাভাবিক—তাই একে গ্রহণ করুন

প্রথমেই বুঝতে হবে, জনসমক্ষে কথা বলার সময় ভয় পাওয়া দোষের কিছু নয়। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বক্তাও শুরুতে এই সমস্যায় ভুগেছেন। তবে তারা ভয়কে জয় করেছেন ধীরে ধীরে, অনুশীলনের মাধ্যমে।

২. প্রস্তুতিই আত্মবিশ্বাসের মূল চাবিকাঠি

যে যত বেশি প্রস্তুতি নেয়, সে তত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। বক্তৃতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন, তথ্য সংগ্রহ করুন, নোট তৈরি করুন এবং বারবার অনুশীলন করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলুন, বন্ধুদের সামনে অনুশীলন করুন—এতে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।

৩. ভুল হলে চিন্তা করবেন না

অনেকে মনে করেন, বক্তৃতার সময় সামান্য ভুল হলে সবাই খারাপ ভাববে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, বেশিরভাগ মানুষ ভুল ধরার জন্য বক্তৃতা শোনে না, বরং তারা বক্তব্যের মূল ভাব বুঝতে চায়। তাই ভুল হলে থেমে না গিয়ে স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যান।

৪. শরীরের ভাষা ও কণ্ঠস্বর ঠিক রাখুন

সোজা হয়ে দাঁড়ান, কাঁধ ঝুঁকিয়ে রাখবেন না।
শ্রোতাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখুন, খুব জোরে বা আস্তে বলবেন না।
হাত-পা স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করুন, একদম স্থির দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কথা বলতেন, তখন তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল স্পষ্ট, বাক্য ছিল সংক্ষিপ্ত ও অর্থবহ। তিনি কখনো জড়তা নিয়ে কথা বলতেন না, বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতেন।

৫. ধীরস্থিরভাবে কথা বলুন

অনেকেই বক্তৃতার সময় দ্রুত কথা বলা শুরু করেন, যা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে কথা বলুন, কথার মাঝে ছোট বিরতি নিন, এতে আপনি আরও আত্মপ্রত্যয়ী দেখাবেন এবং শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হবে।

৬. দোয়া ও ইতিবাচক চিন্তা করুন

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য হযরত মুসা (আ.)-এর দোয়া পড়তে পারেন—

“{রাব্বিশরাহ্‌ লি সাদরি, ওয়া ইয়াস্‌সির লি আমরি, ওয়া হ্‌লুল উকদাতাম মিন লিসানি, ইয়াফ্‌কাহু কাওলি।}”

“হে আমার প্রতিপালক! আমার বুক প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজ সহজ করে দাও, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে মানুষ আমার কথা বুঝতে পারে।” (সুরা ত্বোয়া-হা: ২৫-২৮)

এটি পড়লে মন শান্ত হবে, জড়তা দূর হবে এবং কথা বলার স্পষ্টতা আসবে।
আমরাও যদি এভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রস্তুতি নিই, তবে ভয় কেটে যাবে।

পরবর্তী পর্বের জন্য—

আত্মবিশ্বাসী বক্তা হওয়ার উপায় জানা হলো, কিন্তু কিভাবে এমনভাবে কথা বলা যায় যাতে সবাই মনোযোগ দিয়ে শোনে? কীভাবে শ্রোতাদের আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব?

পরবর্তী পর্বে থাকছে—

শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল
কণ্ঠস্বরের ওঠানামা ও দেহভঙ্গির ভূমিকা
একজন ভালো বক্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি

তাহলে আপনি কি প্রস্তুত আরও দক্ষ বক্তা হওয়ার জন্য? অপেক্ষা করুন পরবর্তী পর্বের জন্য!

নিউজটি শেয়ার করুন