যে কোনো বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১ জুলাই শহীদ পরিবার ও সাতজন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না। আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না সে জাতি, জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না। এই স্বীকৃতিটা জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শহীদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।
সকল হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে… অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়। আমরা অবিচারে নামব না। আমরা যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো নয়- আমরা তাদের মানুষ করব।
তিনি বলেন, এ দেশ আমার একার না, তোমারও এ দেশ। তুমি এদেশের সন্তান। আমিও এ দেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছ। আমি তোমারে কষ্ট দেব না। আমরা একযোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাব… যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয় তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।
এ সময় তিনি জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের আহ্বান জানান, দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন।
জানা গেছে, প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধাদি পাবেন।
গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী, এককালীন ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি, গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে; এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হবে; কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি/আধাসরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন।