বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিন্দিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। ছবি : এএফপি
গাজা পুনর্গঠন করে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর ট্রাম্পের বিম্ময়কর প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং মার্কিন মিত্রদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

হামাস
গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘আগুনে ঘি ঢালা’ বলে মন্তব্য করেছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ কখনোই কোনো দেশকে আমাদের ভূমি দখল করতে বা আমাদের ওপর অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিতে দেবে না।
আমরা রক্তের বিনিময়ে আমাদের ভূমি মুক্ত করব এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এক বিবৃতিতে আব্বাস ও ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কোনো আপস হতে পারে না।
ইসরায়েল
ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে তার পরিকল্পনা ঘোষণার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয়, যা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত’ এবং গাজার ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ ‘ইতিহাস বদলে দিতে পারে’।

ইসরায়েলের চরমপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পরে বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণাকে চিরতরে কবর দেওয়া হবে।’

জাতিসংঘ
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত বিস্ময়কর’ বলেছেন। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব কী বোঝাতে চায়, তা স্পষ্ট নয় এবং ‘এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন’।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, দখলকৃত এলাকা থেকে জনগণকে বিতাড়িত করা আন্তর্জাতিক আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘চীন সবসময় বিশ্বাস করে, ফিলিস্তিনি শাসনের অধীনে গাজা পরিচালিত হওয়া উচিত।’
ফ্রান্স
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘গাজা কোনো তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়।’ তারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তুরস্ক
তুরস্ক ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদ করা এমন কিছু, যা আমরা বা এই অঞ্চল মেনে নিতে পারবে না। এটি আলোচনায় আনাই ভুল।’
মিসর
মিসর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, গাজার শাসন তাদের হাতেই থাকা উচিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি বলেন, ‘গাজার পুনর্গঠন জরুরি, তবে কোনো ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা যাবে না।’
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই গাজায় ফিরতে দিতে হবে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই সঠিক পথ।
জার্মানি
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ‘গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের অংশ, যা ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে তুলবে।’
অস্ট্রেলিয়া
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন ধরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে আসছে এবং তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত।
ব্রাজিল
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, ট্রাম্পের ধারণা ‘প্রায় বোধগম্য নয়’। তিনি বলেন, ‘গাজায় যা ঘটেছে, তা একটি গণহত্যা। আমি জানি না, যুক্তরাষ্ট্র, যারা এই সংঘাতের অন্যতম অংশ, তারা আদৌ গাজার দেখভাল করার জন্য উপযুক্ত কি না।’