‘জুলাই বিপ্লব ইসলামপ্রিয় লেখক ও সাংবাদিকদের মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছে’ – ড. মাহমুদুর রহমান

দেশের কয়েকটি বড় বড় পত্রিকার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের পারিপার্শ্বিকতায় বিশিষ্টজন হতে হলে ভারতপন্থি ও ইসলামবিদ্বেষী হতে হবে। ৫ আগস্টের জুলাই বিপ্লব আমাদের দেশের ইসলামপ্রিয় লেখক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (রোববার) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে দেশের প্রথিতযশা তিন সম্পাদককে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ১২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ এ সংবর্ধনা আয়োজন করে। সংবর্ধনাপ্রাপ্ত তিন সম্পাদক হলেন, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্যতম সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব।

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রধান রফিকুজ্জামানের স্বাগত বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের ইসলামপ্রিয় লেখক ও সাংবাদিকরা তাদের মেধার মূল্যায়ন পান না। এক্ষেত্রে ওআইসিরও কোনো ভূমিকা নেই। মুসলিম লেখকরাও পশ্চিমা বিশ্বের দেয়া পুলিৎজার কিংবা নোবেল পুরস্কারের দিকে তাকিয়ে আছেন তাদের মেধার মূল্যায়নের জন্য। এটাই মুসলিম বিশ্বের ব্যর্থতা। এ কারণে আমাদের আবুল আসাদ ও আলমগীর মহিউদ্দীনের মতো প্রতিথযশা সাংবাদিক ও সম্পাদকরা মূল্যায়ন পান না।

৫ আগস্টের পরে এই বৃত্ত ভাঙার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের জন্য। আমি মনে করি মানরাত ইউনিভার্সিটি সেই বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা করছে আজকে সম্পাদকবৃন্দকে সংবর্ধনা দেয়ার মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাস জানতে হলে সম্পাদকদের এই লড়াই জানতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১/১১ এর সময় একটা ভারতের দালাল সরকার ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা ছিল যে সেই সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছিল। কিন্তু আমি তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে নয়া দিগন্তে সম্পাদকীয় পাতায় লিখতে শুরু করি। এ জন্য ডিজিএফআইয়ের হুমকি ধমকির মুখেও পড়তে হয়েছিল নয়া দিগন্ত কর্তৃপক্ষকে। তারা হুমকি উপেক্ষা আমার লেখা ছাপিয়েছিল।

তিনি দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি শুধুমাত্র ইসলামপ্রিয় মানুষ হওয়ার কারণে মেধার সঠিক মূল্যায়ন পাননি।

অনুষ্ঠানে দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ বলেন, আমাদের দেশে যে অসত্য বা হলুদ সাংবাদিকতার কথা বলা হয় এ জন্য দায়ি সাংবাদিকরা নন। এ জন্য দায়ি যারা সাংবাদিকদের খাটান বা আরও ওপরে আছেন তারা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আজকে সংবর্ধনা দেয়া দেশের প্রতিথযশা তিন গুণী সম্পাদকের মাঝে তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জন্য আমরা তাদেরকে সংবর্ধনা দিতে পেরে কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, এই তিনজন সম্পাদকের প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন একজন আপাদমস্তক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ একজন কলম সৈনিক, গ্রেপ্তারের সময়ও হাতে কলম ধরে রেখেছেন। আর বিগত ১৫ বছরে হাসিনা দেশটা ধ্বংস করলেও সাহসী ও মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ডক্টর হয়েছেন। তিনি ইতিহাসের সাক্ষী, ফ্যাসিবাদের এক জেল থেকে অন্য জেলে গেছেন এবং হামলায় রক্তাক্ত অবস্থায়ও হাসতে পারেন। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার আন্দোলন তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে নেবে। তারা ছিলেন আপোসহীন এবং দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সভাপতিত্বের বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব সংবর্ধনাপ্রাপ্ত তিন সম্পাদককে জীবন্ত কিংবদন্তি উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বা বলার নেই। তারা বাংলাদেশ তথা এশিয়ার সাংবাদিকতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। আগামী দিনে তারা তাদের কলমকে শানিত করে আরও উচ্চকিত কণ্ঠে জাতিকে পথ দেখাবেন আশা করছি।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের সাংবাদিকতা করেছেন এই তিন গুণী সম্পাদক। তারা ছিলেন সমাজের অতন্দ্র প্রহরীরি মতো। তারা আপোসকামী হননি। এর বিপরীতে ফ্যাসিবাদীদের পোষা সম্পাদকদের ভূমিকাও আমরা দেখেছি। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে তারা দেশের স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন করতেন না। আমরা অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতাও দেখেছি। গণঅভ্যুত্থানের পর এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, বিগত ১৫ বছরে আপোসকামী সাংবাদিকতার আমরা দেখেছি। এর বিপরীতে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন ও দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ ছিলেন আপোসহীন। তারা শুদ্ধ সাংবাদিকতা চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

এর আগে তিন সম্পাদকের হাতে সংবর্ধনা ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান অতিথি ও অনুষ্ঠানের সভাপতি। এ সময় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কেক কাটেন অতিথিবৃন্দ। দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (সোমবার) সকালে আশুলিয়ায় বিশ^বিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের সেমিনার হলে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সেমিনার ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন