
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গী, প্রতি বছরের মতো এবারও বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করে। এবারের গন্তব্য ছিল নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার ও বান্দরবান। ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিন দুই রাতের এই সফরে প্রায় ৫৩০ জন শিক্ষার্থী, ১০০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।
আমিরে সফর ড. সালমানের নেতৃত্বে তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (টাকসু)-এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ২৬ জানুয়ারি রাত ১১টায় ১১টি বাসে করে শিক্ষা সফর শুরু হয়। প্রত্যেককে উপহার হিসেবে টি-শার্ট, নোটপ্যাড ও চাবির রিং দেওয়া হয়। এছাড়াও, তিন রাত ও দুই দিনের খাবারের সুব্যবস্থা ছিল, যেখানে বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী মেজবান বিশেষ আকর্ষণ ছিল।
২৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কক্সবাজারে শিক্ষা সফরের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা হিফজুর রহমান, আমিরে সফর ড. মাওলানা সালমান, (টাকসু)-এর ভিপি ইকবাল কবির, সাবেক ভিপি আব্দুল আল মিনহাজ, জিএস সাইদুল ইসলাম, এজিএস মইনুল ইসলামসহ মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের দায়িত্বশীলরা।
নুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “শুধু কক্সবাজার-বান্দরবান ঘুরে দেখলেই হবে না, আমাদের দেশের পর্যটন খাতকে কীভাবে উন্নত করা যায়, সে বিষয়েও চিন্তা করতে হবে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো তাদের পর্যটন শিল্প থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আশা করি, আপনাদের মাধ্যমেই আমাদের পর্যটন শিল্প উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে।”
ড.হিফজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন-“আল্লাহ তাওয়ালা তার পৃথিবীতে ভ্রমণ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। আমরা এই শিক্ষা সফর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যাতে আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে অবদান করাতে পারি, সেই দিকে আমাদেরকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।”
অন্যান্য অতিথিবৃন্দ কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিক্ষা সফরের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর শিক্ষার্থীদের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করা হয় এবং সবাইকে ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
২৮ জানুয়ারি সকালে কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হয়। শিক্ষার্থীরা নীলগিরি ও নীলাচলসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ান।
সন্ধ্যায় বান্দরবানের একটি কনভেনশন সেন্টারে সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আমিরে সফর ড. মাওলানা সালমান ফারসি, মাওলানা সাঈদুর রহমান, মাওলানা নুরুল হক ও ড. মুয়াজ্জিম হোসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিপি ইকবাল কবির, সাবেক ভিপি মিনহাজুল ইসলাম, জিএস সাইদুল ইসলাম, এজিএস মঈনুল ইসলামসহ টাকসুর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা।
ক্বারি মাওলানা তানভিরের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালমান বলেন, “আমি ২০০০ সাল থেকেই তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষা সফরে অংশ নিচ্ছি। আমিরে সফরের দায়িত্ব পেলেও, সকল ব্যবস্থাপনা টাকসুর দায়িত্বশীলরাই করেছেন। আমি তাদের সর্বাত্মক ধন্যবাদ জানাই। আমরা ‘জেন জি’-এর মাধ্যমে যে বিপ্লব পেয়েছি, তা ছিল সামগ্রিক বিপ্লব। আমাদের পরবর্তী বিপ্লব হবে ইসলামের বিপ্লব, তাই তোমাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।”
সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষা সফরের বিভিন্ন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। অনেক শিক্ষক ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন।এরপর বেলুন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রধান করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা সফরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়, যেমন – শ্রেষ্ঠ ভোজনরসিক, লাজুক, বাকচাল ইত্যাদি। পরে অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এই শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন আনন্দদায়ক ছিল, তেমনি দেশের পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়েছে।