জাতীয়করণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখী পদযাত্রা থামাতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ‘এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট’র ব্যানারে পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় ৩০/৪০ জন শিক্ষক আহত হন।
গতকাল স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে স্মারকলিপি দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন শিক্ষকরা। মিছিলটি শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে তাদের আটকে দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। বাধা ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের। আহত হন ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষক। যার মধ্যে একজন নারীসহ পাঁচজন গুরুতর আহত হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা ঘেরাও করতে গেলে আমরা তো বাধা দেবোই। এটাকে তো সংঘর্ষ বলা যায় না। তবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর, সন্ধ্যায় শিক্ষকদের ১৭ জনের প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যান। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আলোচনার ফলাফল জানা যায়নি। ছত্রভঙ্গ আন্দোলনকারীরাও সংগঠিত হয়ে জাতীয় জাদুঘর সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে রাতেও কর্মসূচি চালিয়ে যান। তারা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ১৯৮৪ সালে ৭৮ অর্ডিনেন্স ১৭ এর ২ ধারা মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। তখন থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এনসিটিবি কর্তৃক পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের যোগ্যতা সমমান। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে ৫০০ টাকা ভাতাপ্রাপ্ত হন। সে সময় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। সমমানের স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ১ হাজার ৫১৯টি শুধু মাত্র ৫০০ টাকা অনুদানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাকি মাদ্রাসাগুলোকে অনুদান থেকেও বঞ্চিত করা হয়। বর্তমানে ১ হাজার ৫১৯টি অনুদানভুক্ত মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষক ৩ হাজার ৩০০ টাকা অনুদান পান। ৪০ বছর অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন মাদ্রাসার শিক্ষকরা বিনা বেতনে শিক্ষকতা পেশায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এদিকে, শিক্ষকদের লাঠিপেটা করার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এবতেদায়ী শিক্ষকসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। এবতেদায়ী শিক্ষকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সবশেষ, সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশের হামলার প্রতিবাদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। হামলার প্রতিবাদে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে হয়েছে মশাল মিছিল।
প্রসঙ্গত, শিক্ষকরা গত ছয় দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষকদের ঘোষিত ছয় দফা দাবিগুলো হলো- মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণ করা; প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মতো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া; মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদ্রাসাগুলোকে অবিলম্বে কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের পিটিআই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা; এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে স্থায়ী রেজিস্ট্রেশন প্রদান এবং ভৌত অবকাঠামো নিশ্চিত করা।