২০২৪ সালে ড. ইউনূস, হাসিনা ও আ.লীগ নিয়ে ভুল তথ্যের জোয়ার

অস্থির রাজনীতি, টানা চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া এবং গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পলায়ন, দেশজুড়ে আন্দোলন দমনে গণহত্যাসহ বিভিন্ন কারণে গেল বছর বেশ ঘটনাবহুল ছিল বাংলাদেশের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে ভুয়া তথ্য ছড়ানোতে রেকর্ড গড়েছে দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ও গণমাধ্যমগুলো। গত বছর সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে।

ভুয়া এবং অপতথ্য শনাক্তকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য।

গত বছরজুড়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। আগস্টের পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম হতে শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ভুয়া তথ্যের হাত থেকে রেহাই পাননি সরকারের তিন তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ, আসিফ ও মাহফুজ। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত ও সার্জিসকে নিয়েও ছড়ানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ভুয়া তথ্য।

২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এসব ভুল তথ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ ছড়ানো হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো ছাত্রলীগ বা যুবলীগের নেতাকর্মীকে ছাত্রশিবিরের কর্মী দাবি করেও ছড়ানো হয়েছিল ভুল তথ্য। কোথাও আবার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পুরোনো মিছিল-সমাবেশের ছবি-ভিডিওকে সাম্প্রতিক মিছিল-সমাবেশের ছবি-ভিডিও বলে প্রচার করা হয়েছে।

বিএনপিকে নিয়েও বছরজুড়ে ছড়িয়েছে বিভিন্ন ভুল তথ্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। নির্বাচনের পরপরই তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন– এমন দাবিতে ছড়িয়েছিল ভুল তথ্য।

গত বছর ভুল তথ্য ছড়ানো সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অন্যতম। জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় পুরোনো বা অন্য জায়গার ছবি-ভিডিওকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবি করে ছড়ানো হয়েছে ভুল তথ্য। বিশেষ করে আন্দোলনের পর ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে বেশ কিছু ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালেও সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ভিডিওর মাধ্যমে, যার হার ৩৯ শতাংশ। গত বছর ছবির মাধ্যমে ছড়ানো হয় ২৮ শতাংশ ভুল তথ্য এবং গ্রাফিক কার্ড ব্যবহার করে ছড়ানো হয় ১৪ শতাংশ ভুল তথ্য।

ধর্ম সংক্রান্ত ভুল তথ্যের বড় অংশে দাবি করা হয়- বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন বেড়েছে এবং ইসলামী চরমপন্থিদের উত্থান ঘটেছে। কোথাও কোথাও মুসলিম ব্যক্তি বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাকে হিন্দুদের ওপর হামলা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়াও ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং ইসকনকে নিয়েও ছড়ানো হয়েছে বেশ কিছু ভুল তথ্য। কোথাও বলা হয়েছে সিলেটের ইসকন মন্দির থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বা কোথাও বিএনপি ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে- এমন অপতথ্য দেখা যায়।

দেশের হিসেবে গত বছর ভুল তথ্য ছড়ানোর তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের নাম। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশটির গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য প্রচার করা হয়। দেশ হিসেবে এরপরই অপতথ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইরান ও ফিলিস্তিন। এসব ভুল তথ্যের অধিকাংশেরই বিষয় ছিল ইসরায়েল-ইরান বা ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত দ্বন্দ্ব।

নিউজটি শেয়ার করুন