
পার্সটুডে জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে উত্তরের জেনিনে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। এই নৃশংস আক্রমণ এখনও অব্যাহত রয়েছে। জেনিনে ইসরাইলি সামরিক হামলায় শহরের সরকারি হাসপাতালের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে যে প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনি যুবকরা জেনিন শহরে ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনীর আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। একই সময়ে, ফিলিস্তিনিদের সামরিক শাখা “আল-কুদস ব্রিগেডস” এর সাথে যুক্ত জেনিন ব্যাটালিয়ন ইসলামী জিহাদ আন্দোলন দখলদার বাহিনীর মুখোমুখি হয় এবং দখলদার সেনাদের উপর প্রচণ্ড আঘাত হানে।
জেনিন ব্যাটালিয়ন ঘোষণা করেছে যে তারা দখলদার ইসরাইলি সেনাদের ওপর ‘সিজ্জিল’ গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করেছে, যার ফলে দখলদার সৈন্যরা আহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সূত্রে জানা গেছে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি সেনাদের অবস্থানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী দুটি বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এছাড়াও, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী গতকাল ইসরাইলি সামরিক যান যাতায়াতের পথে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
এদিকে, ইসরাইলি সৈন্যরা পশ্চিম তীরের গ্রাম ও শহরে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।
রামাল্লাহর উত্তরে অবস্থিত “আল-মাজরা’আহ” গ্রামে এক ফিলিস্তিনির বাড়িকে সামরিক ব্যারাকে পরিণত করেছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী এবং ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে আটজন ফিলিস্তিনিকে ধরে নিয়ে গেছে।
জেনিনের গভর্নর কামাল আবু আল-রাব্বের মতে, ইসরাইলি সরকার জেনিনকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি নতুন ফ্রন্টে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিম তীরে ব্যাপক ইসরাইলি সেনা মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে জেনিনের গভর্নর বলেন যে ইসরাইল সরকার জেনিন প্রদেশকে গাজার মতো বিধ্বস্ত এলাকায় পরিণত করার চেষ্টা করছে।
জেনিনে ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোসহ এ অঞ্চলের অন্য দেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সরকারের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলন হামাস, ইসলামি জিহাদ এবং ন্যাশনাল ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন এই আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস আন্দোলনের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডও পশ্চিম তীরে তাদের দুই সদস্যের শহীদ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছে যে তারা ইসরাইলিদের শান্তি ও নিরাপত্তা কেড়ে নেবে।
ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনও ইসরাইল সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, যদি জেনিনে অভিযান অব্যাহত থাকে, তাহলে তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা পুনরায় শুরু করবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান জেনিনসহ পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, অব্যাহত ইসরাইলি আগ্রাসন গাজা যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্বকে বিপন্ন করবে।
শাফকাত আলী খান আরও বলেন, বিশ্বকে অবশ্যই ইসরাইলকে তার অপরাধী কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে, কারণ ফিলিস্তিনি জনগণ গত ১৬ মাস ধরে সবচেয়ে ভয়াবহ আগ্রাসন এবং গণহত্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং এখন গাজায় যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সকালে জেনিন শহরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোটও জেনিন শহরে ইসরাইলি হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।