বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ শুরু হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে ঢাকা-নয়াদিল্লির শীতল সম্পর্কের জেরে পর্যটক ভিসা সীমিত করে ভারত। নয়াদিল্লির এই সিদ্ধান্তে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটক রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ভারতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে তারা প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন।
কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের ভিড় সব থেকে বেশি দেখা যেত। ওখানে হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এক বিরাট পরিষেবা শিল্প। কিন্তু বাংলাদেশি রোগী কমে যাওয়ায় বড় ধরনের ধাক্কা খায় সেসব পরিষেবা শিল্পের মালিকরা।
আবাসিক হোটেল, খাবারের দোকান এবং ট্যাক্সি চালক- সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক মানুষের রোজগার চলতো ওই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে। তাই বাংলাদেশ থেকে পর্যটক বা রোগী যাওয়া যতদিন না স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন এই বিরাট সংখ্যক মানুষের অনিশ্চয়তা কাটছে না।
তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন। দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াওয়েন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাতে ঢাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে সহায়তা এবং চীনের রোগী পাঠানো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
পাশাপাশি চীনের সহযোগিতায় ঢাকার পূর্বাচলে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। যার জমিসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে সম্মতি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চীনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য দেশটির কুনবিং এ তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়ার অনুরোধ জানাবে ঢাকা।
এর আগেও চীন, তুরস্ক ও সৌদি আরবের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মানের আলাদাভাবে হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব এসেছিল করোনাকালে। তিন দেশই তাদের প্রস্তাবে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যত মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, তাদের কথা মাথায় রেখেই ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরিতে আগ্রহী তারা।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ ও থাইল্যান্ডের বামরুদগ্রাত হাসপাতালের আদলে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিল এই ৩ দেশ। সেসময় শেখ হাসিনা সরকার এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তবে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার সেসব প্রস্তাব এখন বিবেচনা করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সত্যিই যদি এমনটা ঘটে তাহলে বাংলাদেশি রোগীদের আর চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে হবে না। বাংলাদেশের মানুষ নিজ দেশে বসেই পাবেন উন্নত চিকিৎসা। সবমিলিয়ে নতুন বাংরাদেশে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নতুন করে আশা দেখছেন মানুষ।