আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দিলে প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধেই আন্দোলন: গণঅধিকার

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ দিলে, তার বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু হবে। আওয়ামী লীগকে কেউ পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে আমাদের রক্তের উপর দিয়ে করতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এ হুশিয়ারি দেন।

গণঅধিকার পরিষদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর আয়োজনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নাইটিংগেল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলার মোড়, পল্টন মোড় ঘুরে আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে এসে শেষ হয়।

রাশেদ খান বলেন, ‘‘৫ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এখনো আওয়ামী হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারের খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা হওয়া মানে বিচারের নামে প্রহসন করা। আমাদের স্পষ্ট কথা শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ভারতে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের শাস্তি না হলে শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে। আর এই খুনি দলটি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। বিচারের পূর্বে তারা কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমাদের দাবি, আওয়ামী লীগসহ সকল লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত করতে হবে।

রাশেদ বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, সরকার বা হাইকোর্টের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে তারা নির্বাচনে যেতে পারবে। আমাদের কথা হলো, স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ দিলে, তার বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু হবে। আওয়ামী লীগকে কেউ পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে, সেটা আমাদের রক্তের উপর দিয়ে করতে হবে। ৭১ এর পর শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একবার গণহত্যা হয়েছে, ২০২৪ এ তার মেয়ের নেতৃত্বে গণহত্যা। আওয়ামী লীগকে তৃতীয়বার আর গণহত্যার সুযোগ দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মত নিষিদ্ধ করতে হবে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় সংলাপে প্রায় প্রতিটি দল ও স্টেকহোল্ডার প্রতিনিধি সরকারের সমালোচনা করেছে।

রাশেদ বলেন, আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনি সকলের বক্তব্য শুনে নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন কিভাবে সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ ৫ মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ভ্যাট-ট্যাক্স বেড়েছে। আর ছাত্ররা যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল, তারই বাংলা অনুবাদ সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছে। তাহলে কি ধরে নিবো সরকার শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করছে? দেখুন, এখন কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম না। এটাকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃত নেতৃত্ব ও আন্দোলনকারীদের মাইনাস করে কমিটি গঠন হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। সুতরাং সরকারকে সবার মতামত নিয়েই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করার মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ৮৩৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশ করেছে। বাকিদের তালিকা কই? ৭১ এর মত কোন বিকৃত ইতিহাস শুনতে চাই না। দ্রুত শহীদের সঠিক তালিকা করুন, শহীদ পরিবারকে ১ কোটি করে ক্ষতিপূরণ দিন এবং আহতের ধরণভেদে ৫০ লাখ করে ক্ষতিপূরণ দিন।

দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হাসান আল মামুন বলেন, ‘‘১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের উপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা এসেছে ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে সর্বশেষ যে সকল এসআই প্রশিক্ষণার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদেরকে রাজনৈতিক কারণে বাদ না দিয়ে তাদের চাকরিতে পূর্ণবহাল করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’

দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, “গণহত্যায় জড়িত অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তার প্রতি আহ্বান আপনি না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ছাত্র জনতার জীবনের বিনিময়ে অনেকেই উপদেষ্টা হয়েছেন। অধিকাংশ উপদেষ্টারই গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা ছিল না। আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কাজ করলে, জনগণ কিন্তু আপনাদের পদে রাখবে না।

গণঅধিকার পরিষদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঈসমাইল আহমেদ বন্ধন, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন