টানা ১৫ মাস লড়াই শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যুদ্ধবিরতির আওতায় গাজায় অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে । এ যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে স্মরণকালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও বিধ্বংসী লড়াইয়ের অবসান ঘটাতে পারে।
গাজা যুদ্ধ এমন এক লড়াই, যা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ছাপিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি এ লড়াই কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বকে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে কূলকিনারাহীন অস্থিরতার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
এ যুদ্ধে ইসরায়েল কৌশলগতভাবে নানা সাফল্য অর্জন করার দাবি করতে পারে, যেমন ইসমাইল হানিয়াসহ হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা, হামাসকে সমর্থন দেওয়া লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর, এমনকি ইরানে আক্রমণ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মেরে ফেলা ও ক্ষতিসাধন করা ইত্যাদি।
কিন্তু ইসরায়েল তার প্রধান দুই লক্ষ্য হাসিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর একটি, হামাসকে নির্মূল করা। অন্যটি, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া সব ইসরায়েলিকে ফেরত আনা। গাজায় বিরামহীন নিষ্ঠুর হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটিকে অনেকটাই দুর্বল করতে পেরেছে, কিন্তু তারা আজও টিকে আছে। আবার গাজায় আটক জিম্মিদের কেউ কেউ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলাতেই নিহত হয়েছেন।
গাজায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনাকে নিজেদের ‘পবিত্র কর্তব্য’ হিসেবে দেখছে ইসরায়েল। এ কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একতরফা চুক্তি মেনে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার ‘যন্ত্রণা’ সইতে হবে তাকে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ‘সার্বিক বিজয়’ অর্জন ও গাজা থেকে সব জিম্মিকে দেশে ফেরানোর অঙ্গীকার করেছিলেন, তবে সেসব হয়নি। বিপরীতে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।
ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস অভিযান বিশ্বজুড়ে দেশটিকে নিয়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচারালয় সরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন।
হামাস বলেছে, ইসরায়েলে তাদের ৭ অক্টোবরের হামলার লক্ষ্য ছিল, ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা ও স্বাধীনতার ইস্যুকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিগোচরে নিয়ে আসা, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অব্যাহত দখলদারি চালিয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া ও দেশটির কারাগারে বন্দী নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে আনা।
ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস তাদের প্রত্যাশিত ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে পেরেছে। তবে এর জেরে গাজায় ইসরায়েল যে তাণ্ডব শুরু করেছে, তাতে ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়কর মূল্য দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নিহত ৪৬ হাজার মানুষ।
গাজাযুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে। পুরো বিষয় গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে অবদান রাখে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তি দিতে পারেন, নির্বাচনের আগেই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শপথ গ্রহণের আগে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তাঁর সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়েছে। যদিও বাইডেন প্রশাসন বলছে, কয়েক মাস ধরে তাঁর নিবিড় প্রচেষ্টার ফলই হলো এ যুদ্ধবিরতি।