দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বাসভবনে ঢুকে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাবাহিনী তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এদিকে, শুক্রবার বাসভবনের বাইরে প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ইউনের সমর্থকরা তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন সেখানে।

বিবিসি লিখেছে, প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস) এর আগে ইউনের অফিস ও সরকারি বাসভবনে তল্লাশি পরোয়ানা নিয়ে তদন্তকারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এবারও তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মানবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

এর আগে, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের জন্য একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করে দক্ষিণ কোরিয়ার এক আদালত।

এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এই অঞ্চলের অন্যতম প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ ডিসেম্বর সবাইকে হতবাক করে দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। এই সিদ্ধান্তের জন্য অভিশংসিত করে তাকে ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করা হয়।

বিবিসি জানায়, ইউনের স্বল্প মেয়াদি সামরিক আইন জারির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের অনুরোধে মঙ্গলবার সিউলের ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালত পরোয়ানাটি অনুমোদন করে বলে দুর্নীতি তদন্ত দপ্তর (সিআইও) নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঘটনা এটি।

বিবিসির প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিনিধি বলেছেন, সিআইওর কর্মকর্তারা, পুলিশ এবং প্রসিকিউটরদের একটি যৌথ দল সকাল ৭টার কিছু পরে ইউনের বাসভবনে পৌঁছান।

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, প্রেসিডেন্টের বাসভবনের পথে বাস দিয়ে আটকে রাখায় সিআইওর গাড়িগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে ঢুকতে পারেনি।

কিছু সিআইও কর্মকর্তা পরে একটি খোলা গেট দিয়ে পায়ে হেঁটে এবং বাসের পাশ দিয়ে এগোনের চেষ্টা করলে আরেক দফা একটি বাস এবং একটি সাঁজোয়া যানের বাধার মুখে পড়েন। পরে অবশ্য সেসব বাধা সরিয়ে ফেলা হয়।

তবে প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস তদন্তকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি পিএসএসের প্রধানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, তদন্তকারীদেরকে ইউনের বাসভবনে তল্লাশি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ইউনের আইনজীবী শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইউনের বিরুদ্ধে অবৈধ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা বেআইনি।

ইউনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য তদন্ত কর্তৃপক্ষ শিগগিরই চেষ্টা করবে বলে গণমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার সমর্থকরা বাসভবনের কাছে ভোরের দিকে জড়ো হতে শুরু করে।

একজনকে বলতে শোনা যায়, “জীবন দিয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে।”

কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল জনগণের দ্বারা সুরক্ষিত থাকবেন বলে স্লোগান দেয় এবং সিআইওর প্রধানকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানায়।

ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষায় ‘চলো একসঙ্গে যাই’ লেখা যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা হাতে নিয়ে ৭৪ বছর বয়সী পিয়ং ইন-সু বলেন, তিনি আশা করছেন নব নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউনের সহায়তায় এগিয়ে যাবেন।

এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তদন্তকারীরা ইউনকে গ্রেপ্তারের পর আটকে রাখার জন্য মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় পাবেন।

তখন তদন্তকারীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে পরবর্তী তারা আটক পরোয়ানার জন্য অনুরোধ করবেন নাকি তাকে মুক্তি দেবেন।

সিআইও’র বরাত দিয়ে ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হলে ইয়ুনকে সিউল ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন