রেমিট্যান্স যোদ্ধা, বাংলাদেশ সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের নামে গায়েবী মামলা, সম্মানহানী, হুমকি, মানসিক নির্যাতন, পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষা ও হয়রানি থেকে মুক্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শাহাদাত হোসেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানান।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি বিগত ৩২ বছর ধরে শারজাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত আছি।
তিনি বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সমিতি শারজার সহ সভাপতি হিসেবে গত ছয় বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছি। সভাপতির অনুপস্থিতিতে আমি একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে এই সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত হাটহাজারী প্রবাসীদের বৃহৎ সংগঠন হাটহাজারী সমিতির উপদেষ্টার দায়িত্বে আছি গত তিন বছর ধরে। জীবনে আমার সকল অর্জন সাধারণ মানুষের সাথে ভাগ করে চলেছি প্রতিনিয়ত। গত জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর বাংলাদেশের নেতৃত্বে যখন ডক্টর ইউনুস সাহেব আসলেন তখন অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা সাধারণ প্রবাসীরা পথচলা শুরু করি। কিন্তু কখনো কল্পনা করিনি কিছু দুর্বৃত্ত এখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। তেমনি অসংখ্য সাধারণ প্রবাসীর পথচলাকে বিঘ্নিত করছে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু দুর্বৃত্ত। এসব ষড়যন্ত্রকারী দুর্বৃত্তের হাতে আমিও হতভাগা একজন প্রবাসী।’
তিনি বলেন, এরমধ্যে হঠাৎ আমার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফোনে জানতে পারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মোদাচ্ছের শাহ নামে এক ব্যক্তি আমার গ্রামে গিয়ে আমার খোঁজখবর জানতে চাচ্ছে। এলাকায় আমার অবস্থান কেমন সেই বিষয়েও ওই ব্যক্তির কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে এই মোদাচ্ছের শাহ। নতুন বাংলাদেশে এই ঘটনায় আমি হতবাক হই।
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আমিসহ বাংলাদেশ সমিতি শারজার দুজন কর্মকর্তা যথাক্রমে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শহিদুল ইসলাম ও বদিউল আলম সমিতির সাংগঠনিক কাজে সদ্য বিদায়ী কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই। এসময় কনসাল জেনারেলের অফিস কক্ষের বাইরে তার ব্যক্তিগত সচিব আব্দুস সবুরের কক্ষে আমার সঙ্গে মোদাচ্ছের শাহ নামক এই ব্যক্তির সাথে দেখা হয়। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আমার গ্রামে আমার ব্যাপারে কেন খোঁজখবর নেয়া হয়েছে? এতে মোদাচ্ছের শাহ ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে চরমভাবে গালাগাল ও আমার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। কক্ষে উপস্থিত কনসাল জেনারেলের সচিব আব্দুস সবুর ও আমার দুজন সহকর্মী তার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে।’
শাহাদাত হোসেন বলেন, মোদাচ্ছের শাহ আমাকে প্রহার করতে না পেরে সে দেশে গেলে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। কনসাল জেনারেলের অফিস কক্ষে তার এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আমাকে বিস্মিত করে তুলে। বিষয়টি আমি কনসাল জেনারেলকে জানালে অজ্ঞাত কারণে ওই সময় কনসাল জেনারেল তাকে কিছু বলতে সাহস করেনি। কিছুক্ষণ পর প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কর্মরত একজন সিকিউরিটিকে তাকে কিছু বলতে সাহস করেনি। কিছুক্ষণ পর প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কর্মরত একজন সিকিউরিটিকে নিয়ে আমাকে কনস্যুলেট থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোদাচ্ছের শাহ পুনরায় কনসাল জেনারেলের অফিস কক্ষে আসেন। সিকিউরিটি এসে কনসাল জেনারেলের রুমে ঢুকলে কনসাল জেনারেলের কোন নির্দেশনা না পেয়ে ফিরে যান। সেই সাথে মোদাচ্ছের শাহ ক্ষিপ্ত অবস্থায় আমাকে গালাগাল করতে করতে কনস্যুলেট প্রাঙ্গন থেকে বের হয়ে যায়। পুরো বিষয়টি ওই তারিখের কনস্যুলেটের সিসি ক্যামেরা চেক করলে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ‘পরে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির সর্বস্তরে আলাপ আলোচনা হলেও আমি মান সম্মান এবং ইজ্জতের কথা চিন্তা করে কারো কাছে বিচার দাবি করিনি। কিন্তু বিষয়টি এখানে থেমে থাকেনি। আমি জাপানে অবস্থানকালীন সময়ে আমার এলাকার আত্মীয়স্বজনদের কাছে জানতে পারি আমাকে পুলিশ বাড়িতে খুঁজতে গিয়েছে। বাড়িতে খুঁজতে গিয়ে জনৈক পুলিশ ইন্সপেক্টর জানায় আমার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় আমি ৩০ নাম্বার আসামি। ফলে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে আমাকে তারা খুঁজতে এসেছে। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি মামলার বাদি মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, সে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় বসবাস করে। মামলার নাম্বার (১২), গত ৯ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মামলাটি রুজু করা হয়। ঘটনার তারিখ লেখা হয় ৪ আগস্ট।’
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই সময় আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করেছি। তাছাড়া আমি কখন দেশে ছিলাম এবং কখন বিদেশে এসেছি সব কিছুর ডাটা আমার কাছে রয়েছে। আপনারা চাইলে আমি তা উপস্থাপন করতে পারব। আমার ট্রাভেল হিস্ট্রি চেক করলেও এই প্রমাণ পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন জাহিদুল হাসান ওরফে ফাহিম। এতে আসামি করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সিটি মেয়র, নেতাকর্মীসহ ৬০ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ১৩০ ব্যক্তিকে। মামলার ৩০ নম্বর আসামি হিসেবে রাখা হয়েছে শাহাদাত হোসেনের নাম।